গত ১৯ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হওয়া ইউনাইটেড র্যালিতে হাজির ছিলেন দেশের প্রায় প্রতিটি বিজেপি বিরোধী দলের শীর্ষনেতারা। সেখানে সকলেই আসন্ন লোকসভায় বিজেপিকে নির্মূল করার ডাক দেন। এরপর থেকেই উঠে পড়ে লেগেছে কেন্দ্র। সপ্তাহখানেক আগেই অর্থ তছরুপ ও বালি-খাদান কেলেঙ্কারির অভিযােগে সপা নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের বেশ কিছু অফিসে হানা দিয়েছে ইডি। এবার কেন্দ্রের নজরে বসপা সুপ্রিম তথা উত্তরপ্রদেশের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। ১১১ কোটি টাকারও বেশি মূর্তি কেলেঙ্কারির অভিযোগে বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের সাতটি জায়গায় হানা দেয় ইডির আধিকারিকরা।
ইডি সূত্রে খবর, এই ঘটনায় নিশানায় রয়েছেন বেশ কিছু আমলাও। গতকাল উত্তরপ্রদেশ নিগমের প্রাক্তন এমডি সিপি সিংয়ের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। এর পাশাপাশি তল্লাশি চলে মূর্তি তৈরির সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন সরকারি আধিকারিক ও কন্ট্রাক্টরদের বাড়িতেও হানা দেন অফিসাররা। এতেই ক্ষুব্ধ মায়াবতী ও অখিলেশ অভিযোগ করেছেন, উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা বিরোধী জোট গড়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগাচ্ছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। গতকাল মায়া বলেন, বিজেপি ক্ষুদ্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করেই থাকে। দেশের মানুষ এটা ভালই বোঝেন। তাঁরাই আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দেবেন।
সম্প্রতি মূর্তি কেলেঙ্কারির ব্যাপারে ভিজিল্যান্স রিপোর্ট জমা পড়ে।
সেখানে বসপার প্রতিষ্ঠাতা কাশীরাম এবং দলীয় প্রতীক ‘হাতি’-র মূর্তি তৈরি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানানো হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও মূর্তি তৈরি নিয়ে কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত কেউ যেন ছাড়া না পান বলে প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে লখনউ ও নয়ডা-সহ অন্যান্য স্থানে ২ ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে মূর্তি ও পার্ক গড়েছিলেন মায়াবতী। ওই মূর্তি তৈরির জন্য যে বেলেপাথর কেনা হয়েছিল, তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই টাকার একটা বড় অংশই নাকি রাজনৈতিক নেতা, ইঞ্জিনিয়ার এবং অফিসারের পকেটে ঢুকেছে। এমনই অভিযোগ।
পাশাপাশি স্মারকের জন্য বেলেপাথর কেনার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের লোকায়ুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী নাসিমুদ্দিন সিদ্দিকি ও বাবু সিং কুশওয়া, বিএসপির ১২ জন বিধায়ক-সহ মোট ১৯৭ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেন উত্তরপ্রদেশের লোকায়ুক্ত এনকে মেহরোত্রা। এরপর ২০১৪ সালে লোকায়ুক্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ভিজিল্যান্স দফতর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ রাজকীয় নির্মাণ নিগম, পূর্ত দফতর ও নয়ডার ১০০ জন ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। লোকায়ুক্ত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের কাছে ৮৮ পাতার একটি রিপোর্ট পেশ করে।
যদিও সেই রিপোর্টে মায়াবতীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযােগ পাওয়া যায়নি বলে জানানাে হয়। কিন্তু এই লােকায়ুক্ত রিপাের্টের উপর ভিত্তি করেই এবার বিভিন্ন স্থানে হানা দেয় ইডি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে এভাবে ইডির হানা দেওয়াটা লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের চাপে রাখার কৌশল কিনা, সেই নিয়ে।