দেশের ‘মোস্ট সেলিব্রেটেড ব্যাংকার’ বলা হত তাঁকে। ভারতীয় রিটেল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে নয়া রূপ দেওয়ায় তাঁর অবদান আজও একবাক্যে মেনে নেন সবাই। নিজের দক্ষতা দিয়েই একসময় খ্যাতির চূড়ায় উঠেছিলেন। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে ঠিক সেখান থেকেই একেবারে গভীর খাদে নেমে গেলেন আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছন্দা কোছার। সংস্থার আচরণবিধি এবং সংস্থার স্বার্থ রক্ষার নিয়মভঙ্গ করার অভিযোগে এবার তাঁকে বরখাস্ত করল আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক।
ছন্দার বিরুদ্ধে ওঠা ঋণ দুর্নীতির অভিযোগের জেরে সংস্থার তরফেই বিচারপতি বি এন কৃষ্ণের নেতৃত্বে তদন্ত হয়েছিল। তারই রিপোর্টে প্রাক্তন সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার উল্লেখ করা হয়েছে। আইসিআইসিআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিচারপতি কৃষ্ণর রিপোর্টের ভিত্তিতে ছন্দার পদত্যাগপত্রকে গ্রহণ না করে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছন্দার এই চলে যাওয়াকে ‘টার্মিনেশন ফর কজ’ বলে ধরা হবে।
এর ফলে, এতদিন অবসরকালীন যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা তিনি ব্যাঙ্কের তরফে পাচ্ছিলেন, তার কোনওটিই আর পাবেন না তিনি। ইনক্রিমেন্ট, বোনাস, চিকিত্সাগত সুবিধা এবং তাঁর নামে যে শেয়ার ছিল, সে সবকিছুই বাতিল করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে। সেই সঙ্গে ২০০৯-এর এপ্রিল থেকে ২০১৮-এর মার্চ মাস পর্যন্ত যে বোনাস তাঁকে ব্যাঙ্কের তরফে দেওয়া হয়েছিল, তাও ফেরাতে হবে ছন্দাকে। আইসিআইসিআই কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ছন্দা বলেছেন, ‘এই ঘটনায় আমি ব্যথিত, দুঃখিত ও হতাশ। ব্যাংকের কোনও সিদ্ধান্তই এককভাবে নিতাম না। আমাকে রিপোর্টের কোনও কপিও দেওয়া হয়নি।’
নিজের পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও যাবতীয় নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগত সুবিধার বিনিময়ে ভিডিওকন সংস্থাকে বিপুল অঙ্কের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ছন্দার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ২০১৮ সালের মার্চ মাসে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছিল সিবিআই। তারা জানায় ওই ঋণ অনুমোদিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই চন্দার স্বামীর নিউ পাওয়ার রিনিউয়েবলে বিনিয়োগ করেন ভিডিওকন কর্তা বেণুগোপাল ধূত।
সম্প্রতিই নিউপাওয়ার রিনিউএবেল প্রাইভেট লিমিটেড (এনআরপিএল)-এর মালিক তথা ছন্দার স্বামী দীপক কোছার এবং ভিডিওকন গোষ্ঠীর বেণুগোপাল ধুতের মধ্যে অবৈধ আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অভিযোগ নথিভুক্ত করছে সিবিআই। সিবিআই জানিয়েছে, ছন্দা তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে বিপুল অংকের ঋণ অনুমোদন করেছে স্বামীর সংস্থাকে, তা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের আওতায় পড়ে। ভারতীয় দণ্ডবিধির দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় এফআইআর দায়ের করেছে তারা। ওই এফআইআর-এ বলা হয়েছে, ২০০৯-এর জুন থেকে ২০১২-এর অক্টোবর পর্যন্ত ভিডিওকন গোষ্ঠীর পাঁচটি সংস্থাকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, তা ভারতীয় ব্যাঙ্ক ঋণ নীতি বহির্ভূত।