মোদীর ‘মন কি বাত’ যে আসলে ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’ কিছু একটা বলে দেওয়া, আবারও মিলল তাঁর প্রমাণ। কারণ এবার তিনি যে মন কি বাত বললেন, একমাত্র টাইম মেশিনে চাপলেই সেটি সম্ভব! অথচ না চেপেই সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী।
কী এমন দাবি করলেন তিনি? তাঁর মন্তব্যে ছিল এমনই ইঙ্গিত যে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে তিনিই যেন প্রথম রেডিওকে ব্যবহারের কথা ভেবেছেন। সঙ্গে যোগ করলেন, ঠিক সে ভাবে দেশবাসীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সুভাষচন্দ্র বসুও রেডিওর কথা ভেবেছিলেন। বিষয়টি তিনি এমন ভাবে পেশ করলেন, যেন রেডিওয় কথা বলার পুরোধা তিনিই। আর তাঁকে দেখেই রেডিয়োয় বার্তা দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন নেতাজি।
এ প্রসঙ্গে নেতাজির প্রপৌত্র ও তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু বলেন, ‘যে ভঙ্গিতে মোদী কথা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনিই যেন রেডিও বক্তৃতা শুরু করেছেন। মনে রাখতে হবে শুধু দেশবাসীকে বার্তা দেওয়া নয়, ইউরোপ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও রেডিয়ওয় যোগাযোগ রাখতেন নেতাজি। সেই সময়ে যা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। তাঁর সময়ে টেলিভিশন ও অন্য বৈদ্যুতিন মাধ্যম ছিল না। রেডিওই ছিল যোগাযোগের সব চেয়ে উৎকৃষ্ট মাধ্যম।’
এ বছরের প্রথম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী এ-ও শুনিয়েছেন যে তাঁকে ‘বলা হয়েছে’ নেতাজির আজাদ হিন্দ রেডিওয় বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষাতেও বুলেটিন প্রচার হত। সেটি জনপ্রিয়ও ছিল! আবার চার দিন আগেই লালকেল্লায় নেতাজি সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেছেন তিনি। সেই সংগ্রহশালার প্রবেশদ্বারে নেতাজির ছবির সঙ্গে রয়েছে তাঁর ছবিও।
এ ঘটনায় বিরক্ত বিরোধীরা। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সব কিছু শুরু হয় ‘আমি’ দিয়ে, শেষও হয় ‘আমি’তে। স্বাধীনতা আন্দোলনে জনসঙ্ঘ, আরএসএসের কোনও ভূমিকা ছিল না। এখন কংগ্রেসের নেতাদেরই ধরতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। আর নিজেকে সেই মনীষীদের পাশে বসানোটাও তাঁর পুরনো অভ্যাস।’’
অন্যদিকে, সুগত বসুও বলেন, ‘একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ করি— গান্ধী-নেতাজির মতো যে ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানো হয়, নিজেকে তাঁদের সমকক্ষ মনে করেন নরেন্দ্র মোদী। এই বড়াইকে কখনই রুচিসম্পন্ন মনে করি না।’ সুগতবাবু মনে করিয়ে দেন, লালকেল্লায় ইন্দিরা গান্ধীও এক সময়ে নেতাজিকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলেন। কিন্তু সেখানে সব দলের নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। দীনদয়াল উপাধ্যায়ও ছিলেন। মোদীর মতো ‘একা’ সব কিছু করার চেষ্টা করেননি তিনি।
তিনি আরও জানান, লালকেল্লায় যে নেতাজি সংগ্রহশালা হয়েছে, সেটা ভাল। কিন্তু তাঁর বাবা ও বন্ধুরা মিলে নেতাজির গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, ফিল্ম ফুটেজ, ভয়েস রেকর্ডিং ইত্যাদি সংরক্ষণ করে না রাখলে সেগুলি হারিয়েই যেত। ফলে কৃতিত্বটা যে একা মোদীর, তা নয়। এর পিছনে অনেক মানুষের অবদান রয়েছে।