বাম সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা সত্ত্বেও ক্ষমতায় এসেই রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে খোলনলচে বদলে ফেলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার ফলে এ রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এখন বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে তাবড় তাবড় বেসরকারি সংস্থাও। সে পথ ধরেই বৃহস্পতিবার দেশের তামাম সংবাদমাধ্যমের সামনে বাংলা নিয়ে আশার কথা শোনালেন ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠী অ্যাপোলোর অশীতিপর চেয়ারম্যান ডাঃ প্রতাপচন্দ্র রেড্ডি। তিনি জানিয়ে দিলেন, বাংলায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিনিয়োগ বন্ধ হবে না। আমরা ওখানে মেডিক্যাল কলেজ গড়ব। ইতিমধ্যেই কলকাতার ক্যান্সার হাসপাতালে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি আমরা।
গতকাল চেন্নাইয়ের ওএমআর রোডে দক্ষিণ এশিয়ার ‘আধুনিকতম প্রযুক্তি’র অ্যাপোলো প্রোটোন ক্যান্সার সেন্টার সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে এখানে আসেন ৭০ হাজার কর্মচারীর হাসপাতাল গোষ্ঠীর শীর্ষকর্তা। আজ, শুক্রবার উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুর হাসপাতালটির উদ্বোধন করার কথা। ওই হাসপাতাল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ডাঃ রেড্ডি জানান, ১৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এই প্রোটোন হাসপাতালে। শুধু ভারতই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় কোথাও এই প্রযুক্তি নেই। এই রেডিয়েশন থেরাপি’র মাধ্যমে ফুসফুস, লিভার থেকে শুরু করে মাথা, ঘাড়, চোখ সহ অজস্র ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব হবে প্রায় কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
এরপরেই অ্যাপোলোর শীর্ষকর্তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘বাংলায় মেডিক্যাল কলেজ কি করবেন না? সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগের দরজা কি বন্ধ?’ এর উত্তরে তিনি বলেন, যে কোনও মেডিক্যাল কলেজের প্রকল্প খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। হায়দ্রাবাদে আমাদের একটি মেডিক্যাল কলেজ আছে। আমার নিজের জেলাতেও একটি মেডিক্যাল কলেজ করেছি। এক-একটি থেকে বছরে গড়পড়তা ক্ষতি হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। যতদিন না মেডিক্যাল কলেজ ইউনির্ভাসিটি হচ্ছে, সমস্যা থেকেই যাবে। তবে এরপরেই আশার আলো দেখিয়ে দেশের প্রথম কর্পোরেট হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, আসলে এই দু’টি প্রকল্পের ক্ষতি দেখে বাংলার প্রকল্পটায় একটু দেরি করেছি। কিন্তু, মেডিক্যাল কলেজ ওখানে হবেই।
উল্লেখ্য, বাটানগরে মেডিক্যাল কলেজ গড়ার জন্য অ্যাপোলো গোষ্ঠী জমি নিয়েছিল বছর কয়েক আগে। কিন্তু, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডানকুনির বাসিন্দা সঞ্জয় রায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং একের পর এক চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ আসায় মমতার কোপদৃষ্টিতে পড়ে হাসপাতালের পূর্বাঞ্চলের ব্যবসায় শুধু ভাটাই পড়েনি, ভবিষ্যতে এই গোষ্ঠীর বাংলায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একটি অনিশ্চিত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। অ্যাপোলোর প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া অবস্থানের পর সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রের পোড় খাওয়া চিকিৎসক-স্বাস্থ্যনীতি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, বাংলার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আর বিনিয়োগ করার কথা ভাববে না অ্যাপোলো। তবে সম্প্রতি কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের সেই খারাপ সময় কাটতেই, সকলকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বিনিয়োগ নিয়ে আশার কথা শোনালেন ডাঃ রেড্ডি।
প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর সেই মার্চেই রাজ্যের সমস্ত বড় কর্পোরেট হাসপাতালগুলিকে নিয়ে বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সামনে পরিষ্কার বার্তা দেন, চিকিৎসা ব্যবসা নয়, সেবার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তৈরি করেছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। এখনও পর্যন্ত অজস্র মানুষ সেই কমিশনের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। বাংলায় এ মুহূর্তে ১৩টি সরকারি এবং পাঁচটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। রাজ্য আরও ১০টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাড়পত্র দিয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি চালুর কাজ চলছে যুদ্ধকালীন গতিতে।