শেষ আশা ছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের সে আশায় জল ঢেলে দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, ‘প্রস্তাবিত রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের আশঙ্কাকে আমরা অমূলক বলে উড়িয়ে দিতে পারি না৷’ বিজেপির রথযাত্রার ওপর স্থগিতাদেশ বহাল রাখে তারা। সেই থেকেই যে ভাবে বাংলায় দলের অন্যান্য কর্মসূচি নিয়ে লাগাতার পরিকল্পনা বদলাচ্ছেন বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, তাতে দলের একাংশই বলতে শুরু করেছে দল আসলে উল্টোরথেই যেন বেশি আগ্রহী।
বুধবার যেমন ফের পিছিয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা। এতদিন ঠিক ছিল, আগামী ২৮ তারিখ উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রী জনসভা করবেন। দিল্লী থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সে কথা ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়েও দিয়েছিলেন।
কিন্তু হঠাতই বুধবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে রাজ্য বিজেপিকে জানানো হয়, জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় ২৮ তারিখ মোদী বাংলায় আসতে পারবেন না। তার বদলে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরনগরের জনসভাটি করার চেষ্টা করছেন তিনি। পাশাপাশি, ৪ ফেব্রুয়ারি আসানসোলে জনসভা করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। সেটাও আপাতত পিছিয়ে গিয়েছে।
এ ব্যাপারে দিলীপের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরনগর এবং দুর্গাপুরে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর ৮ তারিখ শিলিগুড়িতে তাঁর জনসভা হবে।’ কিন্তু কেন বারবার পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সভা? দিলীপের সাফাই, ‘আসলে ৩১ তারিখ থেকে সংসদে অধিবেশন শুরু হচ্ছে। ফলে ২৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রী খুবই ব্যস্ত থাকবেন। তাই ওই দিন রাজ্য সফরের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।’
রাজ্য সভাপতির এই উত্তরে অসন্তুষ্ট দলের একাংশের পাল্টা প্রশ্ন, সংসদ অধিবেশনের দিনক্ষণ তো অনেক আগেই ঠিক করা ছিল। তা হলে কেন প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছিল ২৮ তারিখ মোদী ঠাকুরনগরে সভা করবেন? এ প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছেন দিলীপ।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ করার কথা ছিল বিজেপির। প্রধান বক্তা হিসেবে নাম ছিল মোদীর। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আপত্তিতে দু’দিন আগে সেটাও বাতিল করা হয়েছে। চলতি মাসে অমিত শাহের পাঁচটি জনসভা করার কথা ছিল বাংলায়। কিন্তু একটি সভা করেই ইতি টেনেছেন তিনিও। যদিও বিজেপি সভাপতি এখনও জ্বরে ভুগছেন।
তবে দলের এক নেতার কথায়, ‘অমিত শাহের জ্বরটা আসল সমস্যা নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতাই আসল সমস্যা। নির্দিষ্ট করে আমাদের কিছু জানানোই হচ্ছে না দিল্লী থেকে। ফলে আমরাও স্পষ্ট ভাবে বাংলার মানুষের কাছে নেতাদের সফর নিয়ে কোনও ঘোষণা করতে পারছি না। করলেও সেটা পরে পাল্টে যাচ্ছে। জনতার সামনে উপহাসের পাত্র হয়ে যাচ্ছি আমরা।’
ঝাড়গ্রাম এবং সিউড়িতে মুখে মুখে প্রচার করে দেওয়া হয়েছিল মঙ্গলবার অমিতের বদলে জনসভা করতে আসছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অথবা রাজনাথ সিং অথবা নীতিন গাডকরি। কিন্তু তাঁরা কেউই আসেননি। আবার দলও এই প্রচারকে মিথ্যা বলেনি। তবে শেষমেশ পাঠানো হয়েছিল স্মৃতি ইরানিকে। কিন্তু তিনিও ঝাড়গ্রামের সভা সেরেই দিল্লী ফিরে গিয়েছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অপেক্ষায় সিউড়ির মঞ্চে মুখ চুন করে বসেছিলেন রাজ্য বিজেপির গুটিকয় নেতা।
এভাবেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দ্বারা বারবার উপেক্ষিত হয়ে বাংলার মানুষের কাছে হাসির খোরাক হতে হচ্ছে রাজ্য নেতাদের পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদেরও। একইসঙ্গে মুখ পুড়ছে দলেরও। যা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।