প্রস্তাবিত কোনও কাজই ফেলে রাখা পছন্দ করেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের সময় রাজ্যবাসীকে দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতিই প্রায় পূরণ করেছেন তিনি। সাধারণ মানুষের স্বার্থে বহু প্রকল্পের কাজই এখন রমরমিয়ে চলছে। বাকি পড়ে থাকা কিছু কাজও নির্বাচনের আগে শেষ করে ফেলা হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। এরই মধ্যে ‘সময়ের কাজ সময়ে করি/এসো নতুন বাংলা গড়ি’ এমন স্লোগান করে রাজ্য সরকারের জন পরিষেবা অধিকার আইনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন।
ফোল্ডার দেওয়া হচ্ছে ব্লক ও পঞ্চায়েতের সরকারি কর্মীদেরও। ওই ফোল্ডারে রাজ্য সরকারের ৭টি প্রধান পরিষেবাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মূলত দুটি কাজ হচ্ছে। প্রথমত, সাধারণ মানুষ জন পরিষেবার বিষয়ে সবটা জানতে পারছে। আর দ্বিতীয়ত, অনেক সরকারি কর্মী এখনও এ বিষয়ে বিষদে জানেন না। ওই ফোল্ডারের মাধ্যমে তারাও সবটা জানতে পারবেন। যে ৭টি বিষয়কে ফোল্ডারে রাখা হয়েছে, সেগুলি হল: স্বাস্থ্য পরিষেবা, খাদ্য দপ্তর, পরিবহণ, শিক্ষা, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও অনগ্রসর দফতর।
স্বাস্থ্য: শিশুর জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শংসাপত্র। মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়া যাবে ৫ ঘণ্টার মধ্যে। প্রতিবন্ধী শংসাপত্র মিলবে আবেদনের ৩ মাসের ভেতরে।
খাদ্য দফতর: নতুন রেশন কার্ড, যে কোনও পরিবর্তন সব হবে এক মাসেই।
পরিবহণ দফতর: এই দপ্তরে বেশি অভিযোগ ওঠে। সেজন্য বলা হয়েছে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হবে ৫ দিনে। ড্রাইভিং লাইসেন্স হবে ৭ দিনে।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর: যে কোনও মিউটেশন হবে ২ দিনে। আর শংসাপত্র মিলবে ২ দিনেই। শিল্প সংক্রান্ত জমির মিউটেশন করতে সময় লাগবে ২১ দিন, আর কনভার্সন করতে ৩০ দিন সময় লাগবে।
শিক্ষা দফতর: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের নকল মার্কশিট, অ্যাডমিট, শংসাপত্র পাওয়া যাবে ১৫ দিনে। আর মাইগ্রেশন করা হবে ৩০ দিনে।
অনগ্রসর দফতর: শংসাপত্র থেকে যে কোনও কাজ আবেদনের ৪ সপ্তাহের মধ্যে হবে।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর: মুর্শিদাবাদ সংখ্যালঘু জেলা। সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের যে কোনও ঋণ, বৃত্তি হাতে পাবে আবেদনের ৩ মাসের মধ্যে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন করেন। কিন্তু এই আইনে কী কী সুবিধে পাওয়া যায়, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানেন না অনেকেই। এমনকি অনেক সরকারি কর্মীও তা বলতে পারেন না। উল্লিখিত ওই ৭টি দফতরেই মানুষ কাজের জন্য বেশি যান। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই দিনের পর দিন ঘুরতে হয় তাঁদের। তাই কাজে গতি আনতেই এবার এমন ব্যবস্থা।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘নানা পরিষেবা সরকার দিচ্ছে, কিন্তু মানুষ জানেন না। সেজন্য আমরা বাংলায় ফোল্ডার করে সব লিখে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। কোনও সরকারি কর্মী, অফিসারের বিরুদ্ধে কাজ ফেলে রাখার অভিযোগ এলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ফোল্ডারে ফোন নম্বরও দেওয়া আছে। তাই কোনও অভিযোগ থাকলে ফোন করে তা জানাতে পারবেন মানুষ। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্লকে পৌঁছে গেছে ফোল্ডার। যা হাতে পেয়ে সকলে বলছেন, খুবই ভাল উদ্যোগ। সবটা জানার ফলে এখন আর আর রোজ রোজ অফিসের চক্কর কাটতে হবে না।