সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বার্ষিক বৈঠকের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থিক চেহারা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সদ্যই। যাতে রয়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করে উঠে আসা কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান। সেই পরিসংখ্যানে ফুটে উঠেছে আর্থিক বৈষম্যের পুরনো ছবিটাই।
এ বারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের জাতীয় সম্পদের ৫১.৫৩ শতাংশ রয়েছে মাত্র ১ শতাংশ ধনীর হাতে! মোট সম্পদের ৭৭ শতাংশেরও বেশির মালিক মাত্র ১০ শতাংশ ধনী! দারিদ্রসীমার নীচে থাকা ৬০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মোট জাতীয় সম্পদের মাত্র ৪.৮ শতাংশ। আর দেশের ৫০ শতাংশ জনতার মোট সম্পদের পরিমাণ যত, এ দেশের মাত্র ৯ জন ধনীর মোট সম্পদ ততটাই!
একইসঙ্গে ওই রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশের ১ শতাংশ ধনীর দৈনিক আয় গড়ে ২২০০ কোটি টাকা! শুধু গত বছরেই ভারতের এক শতাংশ ধনীর সম্পত্তি এক লাফে ৩৯ শতাংশ বেড়েছে! শতাংশের এ সব শুকনো হিসেব বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা খাতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলি মিলিত ভাবে যে টাকা বরাদ্দ করে, একা মুকেশ আম্বানির আয় তার থেকেও বেশি!
সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ডব্লিউইএফ-এর ৫ দিনের বৈঠক। তার ঠিক আগে এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অধিকার রক্ষা সংগঠন ‘অক্সফ্যাম’। তাতেই ধরা পড়েছে ভারতের এই ভয়াবহ বৈষম্যের ছবি। যা দেখে উদ্বিগ্ন অক্সফ্যামের ইন্টারন্যাশনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর উইনি বায়ানিমা বলেন, ‘এক শতাংশ ধনীর সঙ্গে বাকি জনসংখ্যার আয় এবং সম্পত্তির ব্যবধান কমাতে না পারলে এবং ভারসাম্য আনতে না পারলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোটাই ভেঙে পড়বে।’
অক্সফ্যামের ভারতীয় সিইও অমিতাভ বেহারের গলাতেও উদ্বেগের সুর। তিনি বলেন, ‘সরকার এক দিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমাচ্ছে, অন্য দিকে ধনীদের কর ছাড় দিয়ে বৈষম্য বাড়াচ্ছে। আর সেই বোঝা চাপছে গরিব এবং মধ্যবিত্তদের ঘাড়েই।’ অর্থনীতিবিদদের একাংশ বেশ কয়েক বছর ধরেই বলছেন, যত দিন যাচ্ছে, অর্থনৈতিক বৈষম্য তত বাড়ছে। ভারতের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও দ্রুত খারাপ হচ্ছে বলে মত তাঁদের।
প্রসঙ্গত, বিরোধী দলগুলি বারবারই অভিযোগ করে থাকে প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের চৌকিদার নয়। উনি আসলে আম্বানি-বিজয় মাল্য-মেহুল চোকসিদের চৌকিদার। এই ভয়াবহ রিপোর্টেও এখন তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। যা দেখে কারও কারও কটাক্ষ, মোদী সরকারের আমলে গরীব মানুষের বিকাশ থমকে গিয়ে ‘আচ্ছে দিন’ এসেছে শুধু ধনীদের।