বর্বর ঘটনা। ন্যক্কারজনক ঘটনা। বাংলার খেলাধুলোর ইতিহাসে আগে কখনও এমন ঘটেনি। মাথা ন্যাড়া করে ম্যাচ হারার মাশুল দিতে হল বাংলার জুনিয়র হকি দলের খেলোয়াড়দের। সৌজন্য, কোচ পঙ্কজ আনন্দের তুঘলকি ফরমান!
জব্বলপুরে হকি ইন্ডিয়ার নবম অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় হকি প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার-ফাইনালে হরিয়ানার কাছে ১-৫ গোলে ধরাশায়ী হয় বাংলা। খেলা শেষ হওয়ার পর কোচ পঙ্কজ আনন্দ খেলোয়াড়দের বলেন, “হারের শাস্তিস্বরূপ তোমাদের ন্যাড়া হতে হবে।” খেলোয়াড়দের ওজর-আপত্তিতে কান দেননি কোচ। উল্টে হুমকি দেন, ন্যাড়া না হলে ভবিষ্যতে আর বাংলার হয়ে খেলা হবে না। এর প্রতিবাদ করলেও লাভ হয়নি। ম্যানেজার আলাউদ্দিন এই ব্যাপারে কোচকে নিষেধ করেননি। খেলোয়াড়রা আকুতি জানালে ম্যানেজারও নীরব থাকেন। মনে করা হচ্ছে, কোচের সঙ্গে এই অভিনব, নজিরহীন শাস্তির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ম্যানেজারও।
কলকাতা ফেরার সময়ে স্টেশনে ডেকে খেলোয়াড়দের ফের হুমকি দিয়ে কোচ পঙ্কজ আনন্দ বলেন, “প্রত্যেককে বাড়ি গিয়ে ন্যাড়া হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোবাইলে ছবি পাঠাতে হবে।” দলটি শুক্রবার রাতে কলকাতায় ফেরে। ভীত খেলোয়াড়রা শনিবার খেলোয়াড়রা ন্যাড়া হয়ে ছবি পাঠান কোচের মোবাইলে।
বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ঘটনাটি জেনেছি, অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। অনুসন্ধান করে দেখা হবে দোষী কে। ২৩ তারিখের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।”
অভিযুক্ত কোচ পঙ্কজ আনন্দ অবশ্য ঘটনার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন, “আমি বিরতিতে ছেলেদের বকাবকি করেছিলাম দ্বিতীয়ার্ধে ভালো খেলার কথা বলে। কিন্তু ব্যর্থতার জন্য ন্যাড়া হতে বলিনি। তা হলে জব্বলপুরেই ওদের ন্যাড়া করে কলকাতায় আনতাম।”
ম্যানেজার আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি কোনও খেলোয়াড়কে এমন নির্দেশ দিইনি। কোচ তো খেলোয়াড়দের কত কথাই বলেন। ওরা সব শোনে নাকি! কোচদের কথা শুনলে ওরা তো আরও ভালো খেলত। গ্রুপ লিগে গুজরাত ও অন্ধ্রপ্রদেশ ম্যাচে ওরা সত্যিই ভালো খেলেছে। চারজনের জ্বর হওয়ায় আমরা কোয়ার্টার-ফাইনালে সেইভাবে খেলতে পারিনি।’
বাংলার রনজিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ ব্যানার্জি এই ঘটনার কথা শুনে তিনি বলেন ‘এ যুগে এরকম হয় নাকি? বিশেষত খেলাধুলোয়! ভাবতেই পারছি না। দ্রুত শাস্তি দেওয়া উচিত। আমি হকি ব্যক্তিগতভাবে ভালবাসি। এমন ঘটনা ঘটলে তো আর বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা হকি খেলতে আসবেই না। এ ধরনের কোচ, ম্যানেজারকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।’