একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে ‘কংগ্রেসের ব্যর্থতার স্মারক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের আগে চাকরি তৈরি নিয়ে প্রশ্নের মুখে এখন একশো দিনের কাজকেই আঁকড়ে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি সরকার বলছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পই রোজগার তৈরির অন্যতম উপায়।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৫-তে লোকসভায় দাঁড়িয়েই কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিশানা করে বলেছিলেন, ‘আমার রাজনৈতিক বোধ বলে, মনরেগা কোনও দিন বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ মনরেগা আপনাদের ব্যর্থতার জীবন্ত স্মারক। স্বাধীনতার ৬০ বছর পরেও আপনারা মানুষকে গর্ত খুঁড়তে পাঠিয়েছিলেন।’ গ্রামে আর কোনও কাজ না জুটলেও, গরিব মানুষের জন্য ন্যূনতম রোজগার সুনিশ্চিত করতে ইউপিএ-সরকার মনরেগা-র পরিকল্পনা করে। বিজেপির নেতারা একে সনিয়া গান্ধীর ‘ঝোলাওয়ালা উপদেষ্টা’ ও বামপন্থীদের বুদ্ধি বলে কটাক্ষ করতেন। এখন সেই মনরেগা-কেই রোজগার তৈরির উপায় হিসেবে তুলে ধরায় অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, একে কী ভাবে নতুন রোজগার তৈরির রাস্তা বলা যায়? উল্টে একশো দিনের কাজের চাহিদা বাড়লে ধরে নিতে হবে, গ্রামে বা শহরে অন্য কাজ মিলছে না।
বাস্তবিকই মোদী জমানায় বছর বছর মনরেগা-য় বরাদ্দ বেড়েছে। ২০১৬-র নোট বাতিলের পরে কাজ হারিয়ে শ্রমিকেরা শহর থেকে গ্রামে ফিরেছিলেন। একশো দিনের কাজই হয়ে উঠেছিল ভরসা। তা সামাল দিতে ২০১৭-’১৮-র বাজেটে মনরেগা-য় বরাদ্দ ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা করেছিলেন অরুণ জেটলি। চলতি আর্থিক বছরে বাজেটে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার পর, জানুয়ারিতে আরও ৬,০৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সরকারের আশা, চলতি বছরেও ২৩৫ কোটির বেশি শ্রমদিবস তৈরি হবে।
অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, গ্রামে-শহরে যে কাজের অভাব রয়েছে, মনরেগা-র কাজের বিপুল চাহিদা থেকেই তা স্পষ্ট। বাড়তি অর্থ ঢেলে তা সরকারকে সামাল দিতে হচ্ছে। রোজগার সুনিশ্চিতকরণের পক্ষে সামাজিক আন্দোলনকারী নিখিল দে-র যুক্তি, ‘বকেয়া মজুরি পাওনা, চালু কাজের খরচ, রাজ্যগুলির পাওনা মেটাতেই এই টাকা খরচ হয়ে যাবে। আগামী আড়াই মাসে নতুন কাজের জন্য অর্থ থাকবে না।’