সেদিন ছিল ১৯৯২ সালের ২৫ নভেম্বর। ব্রিগেডের এক বিপুল জনাসমাবেশ থেকে তৎকালীন বাম সাম্রাজ্যের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী শনিবার আরও এক ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছেন বাংলার অগ্নিকন্যা। এবার মোদী সাম্রাজ্যের বিদায়ঘণ্টা বাজাবার পালা। তাই সমাবেশ আরও বড়, আয়োজন আরও বেশী। ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেড তাই সর্বার্থেই হতে চলেছে রাজসূয় যজ্ঞ।
শনিবারে এই ব্রিগেডের ভিড় ছাপিয়ে যাবে এ যাবৎকালের যাবতীয় রেকর্ড। এমনই আশা করছেন খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে বেরনোর সময় মমতা বলেন, ‘১৯ জানুয়ারির সভায় যত মানুষ আসবেন তা এযাবৎ কালে আগে কখনও দেখা যায়নি। আগেকার সমস্ত জনসভার ভিড় ছাপিয়ে যাবে শনিবারের ব্রিগেড।’
দলের পক্ষ থেকে প্রতি জেলাকে টার্গেট দেওয়া হয়েছে ১০ লক্ষ লোকের জমায়েত নিয়ে ব্রিগেডে আসতে। সেটা হলে ২ কোটি লোক ব্রিগেডের সভায় আসবে। আর ওত লোক আসলে একটা ব্রিগেডের মাঠে জায়গা দেওয়া যাবে না। সেটা না হলেও, যদি টার্গেটের ২০ শতাংশও তৃণমূল করে দেখাতে পারে, তাহলেও রেকর্ড। কারণ, এর আগে কলকাতার বুকে কখনই ৪০ লাখের জমায়েত কেউই দেখেনি। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটাই করে দেখাতে চলেছেন।
এ কথা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না, লোকসভা ভোটের আগে এই মঞ্চই হতে চলেছে সব থেকে বড় মোদী বিরোধী মঞ্চ। কে নেই সেখানে! ২২ টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। তাঁদের মধ্যে ৩ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী – অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নায়ডু, দিল্লীর অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কর্নাটকের কুমারস্বামী। একজন প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। এছাড়া তেজস্বী যাদব, শারদ পাওয়ার, বদরুদ্দীন আজমল, স্ট্যালিন, অরুন শৌরি,অজিত সিং, জয়ন্ত চৌধুরী, ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, শত্রুঘ্ন সিনহা, বাবুলাল মারান্ডি, মল্লিকার্জুন খারগে, জিগনেস মেওয়ানি, হার্দিক প্যাটেল, যশবন্ত সিনহা-রা থাকছেন। অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও ফোনে কথা হয়েছে। তিনিও এই সভায় যোগ দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মায়াবতী ও কংগ্রেস বাদে অন্য সবাই শনিবারের ব্রিগেডে আসার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন।
সেই মতো প্রস্তুতিও চলেছে। বুথে বুথে সভা হয়েছে। দেওয়াল লিখন, ব্যানার, পোস্টার, জনসভা। এখন চলছে তুলির শেষ টান। খুঁটি পুজো করে চলছে মঞ্চ বাঁধার কাজ। এতদিন পর্যন্ত যেখানে মঞ্চ বেঁধে সভা করা হত সেখান থেকে আরও ২৫ ফিট অর্থাত্, ভিক্টোরিয়ার দিকে আরও খানিকটা এগোবে ব্রিগেডের মঞ্চ। এতে মাঠে জায়গা আরও বাড়বে।
রাজনৈতিক তারকা সমাবেশের কথা মাথার রেখে মঞ্চ বিন্যাসেও চমক। মূল মঞ্চ-সহ দু’পাশে দুটি করে মোট ৫ টি মঞ্চ তৈরি হচ্ছে এবার। মূল মঞ্চটি ১০০ ফুট লম্বা এবং ৪৫ ফুট চওড়া। উচ্চতা ১২ ফুট। এই মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী-সহ শাসক দলের হাতেগোনা নেতা-নেত্রীরা থাকবেন। মূল আকর্ষণ ভিন রাজ্য থেকে আসা বিরোধী রাজনীতির তারকারা। মূল মঞ্চের ডান ও বাম দিকে আরও ২টি করে মঞ্চ। মূল মঞ্চের পাশের মঞ্চের একটি দলের সাংসদ, বিধায়কদের জন্য বরাদ্দ৷ অন্যটি মন্ত্রীদের জন্য। আর একটি মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। অন্যটিতে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব থেকে আঞ্চলিক ও ব্লক স্তরের নেতা-নেত্রীরা থাকবেন৷
ব্রিগেড জুড়ে তাই বসানো হচ্ছে হাজারটি মাইক। ৭০০টি আয়রনের রড দিয়ে তৈরি হচ্ছে কাঠামো। থাকছে ওয়াচটাওয়ার। বসছে এলইডি টিভি। ভিড় সামলানোর জন্য থাকবেন প্রায় ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের মতো জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে দূরের কর্মী-সমর্থকদের জন্য।
তাই সাংগঠনিক স্তরে এই মুহূর্তে তৃণমূলের প্রস্তুতি তুঙ্গে। সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন স্তরের নেতা-নেত্রীদের কোমর বেঁধে মাঠে নামার ভূয়সী প্রশংসাও করেন মমতা। বলেন, ‘ওরাই তো সব করছে। আমাকে তো সাগরমেলার খোঁজ খবর নিতে হচ্ছে’।
সব মিলিয়ে রাজসিক তোড়জোড়। ১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসু অনেকটা এমন ব্রিগেড করেছিলেন। ৪১ বছর বাদে সেই ব্রিগেডকেও ছাপিয়ে যেতে চলেছে মমতার উনিশের ব্রিগেড। ইতিহাসের সরণি বেয়ে এখন মহাব্রিগেডের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে সিটি অফ জয়।