নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে আসাম। ক্রমশই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তো ছিলই। শুক্রবার এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দেন গুয়াহাটি আইআইটি-সহ অন্যান্য কলেজের পড়ুয়ারাও। প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা জানিয়ে দেন, শহরের মধ্যে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় যাতায়াত করতে পারবে না।
গুয়াহাটি কর্মাস কলেজের সামনে বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা জানান, রাধাগোবিন্দ বড়ুয়া রোড দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল এবং অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাকে যাতায়াত করতে দেওয়া হবে না। তাঁদের কনভয় দেখলেই রাস্তা অবরোধ করা হবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি জারি থাকবে বলেও জানান পড়ুয়ারা।
নাগরিকত্ব বিল ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারত। বিক্ষোভের আঁচ লেগেছে আসামেও। গত কয়েকদিন ধরে চলা বিক্ষোভের মধ্যেই এদিন পড়ুয়ারা পথ অবরোধ কর্মসূচি নেওয়ায় আন্দোলনের মাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে গুয়াহাটি আইআইটি সামনে জড়ো হয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। তাঁদের অনেকেরই হাতে ছিল বিলের প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়ালের বিধানসভা কেন্দ্র মাজুলিতে মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানান অসমিয়া যুব মঞ্চের সদস্যরা। বিক্ষোভে শামিল হন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সদস্যরাও। এর পাশাপাশি আন্দোলনে যোগ দেন আসামে বাসরত ভিনরাজ্যের পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ। তবে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বেশ কিছু কলেজের শতাধিক পড়ুয়াকে আটক করেছে পুলিশ।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হওয়া সংখ্যালঘু অ-মুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য গত মঙ্গলবার লোকসভায় নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬ পাশ হয়েছে। এরপরেই আসাম-সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে যাবতীয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসাম সরকার। গুয়াহাটির বড় অংশে জারি হয় ১৪৪ ধারা।
অন্যদিকে, নাগরিকত্ব বিলের বিরোধীতায় ইস্তফা দিয়েছেন বিজেপির শরিক দল অগপর মন্ত্রীরা। বুধবারই আসামের রাজ্যপাল জগদীশ মুখীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন অগপর তিন মন্ত্রী অতুল বরা, কেশব মহন্ত ও ফণিভূষণ চক্রবর্তী। দলের শীর্ষ নেতা প্রফুল্লকুমার মহন্ত মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে ইস্তফার পরামর্শও দেন। আবার বিজেপি সরকারের আরেক শরিক বিপিএফ-ও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে অসন্তুষ্ট। বিধানসভার স্পিকার হিতেন্দ্রনাথ গোস্বামীও নাগরিকত্ব বিল পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন।