যাত্রা হল বাংলার বহু পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা। ক্ষমতায় এসেই বাম জমানায় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই শিল্পকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু করেন যাত্রা উৎসবও। আর এবার দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের ভাতা ৯ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক ধাক্কায় ১৫ হাজার টাকা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে যাত্রা শিল্পীদের তিনি পরামর্শ দিলেন, রাজনৈতিক পালার বদলে আরও বেশি সামাজিক পালা করার জন্য।
শুক্রবার ২৩তম যাত্রা উৎসবের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী ৬৮টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পেরও উদ্বোধনও করেন। একইসঙ্গে শিলান্যাস হয় ৪২টি প্রকল্পের। এছাড়া ১০ জনকে প্রখ্যাত যাত্রাভিনেতাকে ‘শান্তিগোপাল’ ও ‘তপনকুমার’–এর নামাঙ্কিত পুরস্কারে সম্মানিত করেন তিনি। যাত্রা উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার গর্ব, আদি সংস্কৃতি যাত্রাপালা হারিয়ে যেতে বসেছিল। আমাদের সরকার অন্যান্য উৎসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাত্রাকেও তার সোনার যুগে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’
এরপরই তাঁর ঘোষণা, ‘যাত্রাশিল্পীদের যে এককালীন ৯ হাজার টাকা দেওয়া হত তা এবার বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হল।’ শিল্পীদের তিনি বলেন, ‘বাস্তব নিয়ে যাত্রা করুন। রাজনীতি নয়, মানুষের কথা বলবে সেই যাত্রাপালা। যা মানুষকে সঠিক দিশা দেখাবে।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত দুঃস্থ যাত্রা শিল্পী থেকে যাত্রার সঙ্গে যুক্ত কুশীলবরা। তাঁদের কথায়, ‘বাংলার আদি সংস্কৃতি হল যাত্রা। মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে তাতে প্রাণ ফিরেছে। উপকৃত হয়েছে যাত্রা শিল্প।’
যাত্রা উৎসবের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পূর্ণেন্দু বসু, ব্রাত্য বসু, ইন্দ্রনীল সেন, তাপস রায়, সুজিত বসু, সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সৌগত রায়, দীনেশ ত্রিবেদী, বারাসতের বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী–সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে যাত্রা মানুষের কথা বলে, যে যাত্রা দিশা দেখায়, ভোরের আলো দেখায়, ছাত্রছাত্রী থেকে মা বোনদের সন্মান অটুট রাখে, সেই ধরনের যাত্রাপালা করার কথা নতুন করে ভাবুন। কোনও রাজনৈতিক যাত্রা করবেন না। প্রকৃত যাত্রা সেটাই হওয়া উচিত, যা সমাজের মানুষের কথা বলে।’
যাত্রা বাম আমলেও ছিল। কিন্তু তখন অধিকাংশ শিল্পীর আর্থিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। যাত্রাশিল্পীদেরই অভিযোগ, সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার ফলে বাংলার এই আদি সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছিল। ২০১৩ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই চিৎপুরের যাত্রা মহল্লায় নতুন জোয়ার এসেছে। একদিকে সরকারি সহায়তা, অন্যদিকে রাজনৈতিক পালার মোড়ক ছেড়ে সামাজিক পালার দিকে অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার কারণেই যাত্রার বুকিং আগের থেকে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এখন সব যাত্রাপালায় থাকছে ‘থিম সং’।
শুক্রবার যাত্রা মঞ্চের মেক-আপ ঘরে দাঁড়িয়ে সাড়ে পাঁচশোরও বেশি যাত্রার গান লেখা গীতিকার ও প্রবীণ যাত্রাশিল্পী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘যাত্রায় আগে কোনও দিন থিম সং ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এটা সম্ভব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা, যাত্রাপালায় যেন রাজনীতির রং না লাগে।’ উজ্জ্বলের মতো গৌতম নন্দী, অঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ গুহরা একসুরে জানান, রাজ্যের বর্তমান সরকার আদি সংস্কৃতি এই যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সব ধরনের চেষ্টা করছে। দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের জন্য আগে কোনও ভাতা বরাদ্দ ছিল না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই তাঁরা ভাতা পেয়েছেন।