কথায় আছে, ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধে হয়’। এদিকে কয়েক বছর আগেও যিনি কথায় কথায় ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতির জোর দেখাতেন, তাঁর মুখেই এখন ‘ভয়’-এর কথা। তবে কি মোদীর ‘আচ্ছে দিন’ ফুরিয়ে এল এবার! তাঁর ‘বিকাশ’-এর সূর্য যে অস্তাচলে, তা কি সন্ধ্যা নামার আগেই টের পেয়েছেন তিনি!
শিয়রে লোকসভা ভোট। কিন্তু মোদীর স্বস্তি কই! রাফাল-কাণ্ডে তাঁকে কোণঠাসা করতে দেশের কোণায় কোণায় একটি স্লোগান অসম্ভব জনপ্রিয় করে তুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’। নিজের গায়ে লেগে যাওয়া সেই ‘চোর’ তকমা ঘোচাতেই এখন মরিয়া মোদী। তার সঙ্গে রয়েছে কৃষির দুরবস্থা, ক্রমবর্ধমান বেকারি, পেট্রোপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম-সহ একগুচ্ছ বিষয়। আবার এর পাশাপাশি রয়েছে নোটবন্দী, জিএসটি, সিবিআই, আরবিআইয়ের মতো ইস্যুতে বিরোধীদের ক্রমাগত আক্রমণ। এমনকি সংবাদমাধ্যমকে তাঁর এড়িয়ে যাওয়া নিয়েও নানা কটাক্ষ।
এ সবের গুঁতোতেই যে ৫ রাজ্যে ভরাডুবি হয়েছে পদ্মের, তা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে বিজেপির অনেক নেতা-কর্মীরাও। তবে সেই হারের দায় ঝেড়ে ফেলে এরপরেও লোকসভায় তিনিই যে আবার জিতে ফিরছেন, সেই মন্ত্র দিতে দু’দিনের দলীয় বৈঠক ডেকেছেন মোদী। সে জন্য দিল্লির রামলীলা ময়দানে জড়ো করা হয়েছে হাজার দশেক বিজেপি কর্মীকেও। কিন্তু এ সবের মধ্যেও তাঁর মুখে শোনা গেল ভয়ের কথা। গতকালই মহারাষ্ট্রের এক সভায় তিনি বলেন, ‘কমিশনখোরদের সব বন্ধুরা একজোট হয়ে চৌকিদারকে ভয় পাওয়ানোর স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু মোদী অন্য মাটিতে গড়া। তাঁকে ভয় দেখানো যাবে না।’
এমন মন্তব্যের পরেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন, যে সত্যিই নির্ভীক, তাকে কি আদৌ কোনও ভাবে ভয় দেখানো সম্ভব? আর মোদীই বা হঠাৎ এত ভয়-ভয় কেন বলছেন? এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘মোদী ভয় পাচ্ছেন বলেই মুখে ভয়ের নাম নিচ্ছেন। কারণ, তিনি দেওয়াল লিখন পড়তে পারছেন। সেখানে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁর বিদায় সাফ লেখা আছে।’ অন্যান্য বিরোধীরা বলছেন, এই ভয়ের কারণেই লোকসভা ভোট এগিয়ে আনতে পারেন মোদী। চলতি মাসে মকর সংক্রান্তির পরেই হয়ে যেতে পারে লোকসভার ভোট ঘোষণা।
অনেকের ধারণা, সে কারণেই তড়িঘড়ি উচ্চবর্ণের সংরক্ষণের ঘোষণা করে ফেলেছেন। কিন্তু তাতে হয়েছে আরেক বিপদ! বিজেপির ওপরে চটেছে দলিত-ওবিসিরা। আসলে মোদী সরকার এখন যে সিদ্ধান্তই নিচ্ছে, তা-ই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে তাদের কাছে। এ নিয়ে বিরোধী দলের এক নেতার খোঁচা, ‘মোদী বরং জ্যোতিষী দেখিয়ে নিজের কোষ্ঠী বিচার করুন। পুজো-আচ্চা, যাগ-যজ্ঞ করুন।’