ভারতে ভোটের আগে দেশের সমস্যার কথা গুরুত্ব পায় না। ভোট এলে গুরুত্ব পায় স্রেফ রামমন্দির আর ঋতুমতী মহিলারা মন্দিরে ঢুকবেন কি ঢুকবেন না, সে বিষয়গুলো। যার ফলে আসল সমস্যা দূরেই থেকে যায়। সোমবার এশিয়াটিক সোসাইটিতে আদিবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশ অনুষ্ঠানে নাম না করে এভাবেই বিজেপিকে কটাক্ষ করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
শনিবারই হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়া বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি। আর গতকাল তিনি বলেন, ‘বিশ্বের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো বা দেশের সমস্যার কথা ভারতে ভোটের আগে গুরুত্ব পায় না। গুরুত্ব পায় রামমন্দির আর ঋতুমতী মহিলারা মন্দিরে ঢুকবেন কি ঢুকবেন না, সে বিষয়গুলো।’
একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরম্পরা মেনে কাজ হচ্ছে না। আগে সেখানে শতাধিক পড়ুয়া ভর্তি হত। মুক্তমনা বৌদ্ধভাবনা জানতে লোকে আসত। তবে এখন বছরে বড় জোর ২০ জন আসে। কারণ এখন এই প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভাবধারায় চলছে।’
বিজ্ঞান কংগ্রেসে টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে যা বলা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিজ্ঞান কংগ্রেসে যা হচ্ছে তা বিজ্ঞান নয়। কৌরবরা যদি টেস্ট টিউব বেবি হয়, তা হলে বিজ্ঞানের পরিবর্তে নতুন শব্দ খুঁজে বের করতে হবে।’ এর পাশাপাশি তিনি বলেন, ’পারস্পরিক ভেদাভেদ থেকে দূরত্ব আসে। আদিবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিকল্পিত ভাবে পরিকল্পনা করা হলে সমাজ এগোবে।’
অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে গতকালও তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘দেশে অসহিষ্ণুতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিছু লোককে টার্গেট করা হচ্ছে।’ নাসিরুদ্দিন শাহকে যেভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে। সেটা শীঘ্রই বন্ধ হওয়া দরকার। তাঁর মতে, প্রত্যেক মানুষেরই মত প্রকাশের অধিকার আছে। ঠিক তেমনই, কোনও কিছু ভুল মনে হলে তার বিরুদ্ধে বলার অধিকারও আছে।
এর পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিরূপ মত প্রকাশ করা হচ্ছে, এমনকি সাংবাদিকদেরও হেনস্থা হতে হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। যেভাবে ওই অভিনেতাকে হেনস্থা করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ করা উচিত। দেশে যা চলছে অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া উচিত।’
নোট বাতিল থেকে শুরু করে দেশে তৈরি হওয়া অসহনীয় পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বারে বারে মুখ খুলেছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। রবিবারই তিনি অসমের সমস্যা নিয়ে বলেছিলেন, কাউকে দেশ থেকে বের করা মানেই যে কর্তব্য পালন করা হল এমনটা নয়। আগের থেকে দেশে এখন অসহিষ্ণুতা অনেকটাই বেড়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। তাঁর মতে, ‘নীরব থাকা নয়, বরং কথা বলতে হবে। সামগ্রিক ভাবে অসহিষ্ণুতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি।’