এবার রাফাল কান্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘মেঘনাদ’ বলে কটাক্ষ করলেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বুধবার লোকসভায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বাকযুদ্ধের যাবতীয় উত্তেজনা এক লহমায় মিইয়ে গেল সৌগত রায়ের নিক্ষেপ করা মেঘনাদ তিরে।
গতকাল লোকসভায় রাফাল চুক্তি নিয়ে বিতর্ক চলছিল দীর্ঘক্ষণ ধরেই। রাহুল এবং জেটলির যুক্তি ও পাল্টা যুক্তিতে সংসদ কক্ষ যখন মুখর, ঠিক এমন সময়ই সৌগত বাবু বলে ওঠেন, ‘আপনারা জানেন রামায়ণে মেঘনাদ নামের এক চরিত্র ছিল। মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করতেন। এখানে দেখা যাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদী মেঘনাদের ভূমিকা নিয়েছেন। ওঁর সামনে আসার সাহস নেই। তাই জেটলিকে সামনে রেখেই লড়ছেন তিনি।’
সৌগত রায়ের এমন নজিরবিহীন আক্রমণে হাততালির ঢেউ ওঠে গোটা লোকসভা জুড়েই। তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধী দলের সাংসদরাও। এরপরই প্রবীণ এই তৃণমূল সাংসদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাফাল চুক্তির মাধ্যমে মুম্বই ও নাগপুর হয়ে অর্থ তছরুপ হয়েছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির তহবিল মজবুত করতেই এমনটা করা হয়েছে।
গতকাল রাফাল বিতর্কে কংগ্রেস সভাপতি রাহুলকে কোণঠাসা করতে গিয়ে প্রথমেই ইয়ান ফ্লেমিং সৃষ্ট চরিত্র জেমস বন্ডকে টেনে আনলেন জেটলি। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল জেমস বন্ডের ছবি গোল্ডফিঙ্গার। রাহুলকে কটাক্ষ করতে গিয়ে সেই ছবির সংলাপই তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রথম কোনও দুর্নীতির ঘটনা সামনে এলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেনিফিট অফ ডাউট দিতাম। কিন্তু, একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা সামনে এলে জেমস বন্ডের কথা মনে পড়ে। রাহুল হয়তো জেমস বন্ড পড়েছেন। একবার আচমকা, দ্বিতীয়বার কাকতালীয় এবং তৃতীয়বার ষড়যন্ত্র।’
জেটলির এমন মন্তব্যের পরে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভুল ধরিয়ে দিয়ে সৌগত বাবু বলেন, ‘জেটলিজি, আপনি নিজেই ভাল করে জেমস বন্ড পড়েননি। সংলাপে তৃতীয়বার ষড়যন্ত্র মোটেও ছিল না। ছিল শত্রুতাবশত পদক্ষেপ।’ এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, জেটলিজি আপনার স্মৃতিশক্তি আপনাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। পাশাপাশি, প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অল্যাদের নামের উচ্চারণও অর্থমন্ত্রী ঠিকমতো করতে পারেননি বলেও খোঁচা দেন প্রবীণ সাংসদ।
অর্থমন্ত্রীর কথার রেশ ধরেই তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘জেটলি বোঝাতে চাইছেন, তোমরা করেছ তাই আমরাও করছি। এই আমরা-ওরার লড়াই শুনতে চাই না। যৌথ সংসদীয় কমিটি তৈরি করা হোক।’ একইসঙ্গে মোদী সরকারের কাছে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব চান তিনি। এক, ৫২৬ কোটির রাফাল বিমান কোন যুক্তিতে ও কার নির্দেশে ১৬৭০ কোটিতে কেনা হল? দুই, মোদী তাড়াহুড়ো করে রাফাল চুক্তি সই করলেন কেন? মোদীর সেই ফ্রান্স সফরে অনিল আম্বানী তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন?
পাশাপাশি, রাফাল নিয়ে জবাব দিতে রাজ্যসভা ছেড়ে লোকসভায় কেন জেটলি? এই প্রশ্নকে সামনে রেখে তৃণমূল সাংসদের কটাক্ষ, লোকসভায় এনডিএর তিনশোর বেশি সাংসদ রয়েছেন। কিন্তু জবাব দেওয়ার জন্য জেটলিকে ডেকে আনতে হল সেই রাজ্যসভা থেকে! অন্যদিকে, বিরোধীদের প্রশ্নবাণ থেকে গা বাঁচাতে মেঘের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।