গত ১৯ ডিসেম্বরই নবান্নে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকদের চেক কেটে হাতে হাতে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার। এরপর প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে খাদ্য দফতর মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই ৫০ হাজারেরও বেশি চেক তৈরি করল। জানা গেছে, ওই চেকের মাধ্যমে আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে চাষিদের ধানের দাম মেটানো হবে।
ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় চেক পাঠানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক যখন রাতারাতি হাজার হাজার চেক তৈরি করে খাদ্য দফতরকে দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়, তখন এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক দ্রুত সেই চেক তৈরি করতে রাজি হয়। প্রথম দফায় তাই চাষিদের ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের চেকই দেওয়া হবে। পরবর্তী পর্যায়ে দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেক ইস্যু করবে খাদ্য দফতর।
বিগত কয়েক বছর চাষিদের ধান বিক্রির টাকা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সময় চেকের প্রয়োজন হতো না। চলতি মরশুমে গত নভেম্বর মাস থেকে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা শুরু হয়। ডিসেম্বর মাসে তাতে গতি আসে। প্রথমে চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হচ্ছিল।
কিন্তু নবান্নের ওই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এবার থেকে চেকে ধানের দাম মেটানো হবে। চাষিরা ধান বিক্রি করে হাতে হাতে চেক নিয়ে যাবেন। কারণ সরকারের ধারণা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর ফলে চাষিরা অসুবিধায় পড়ছেন। তাই সরকারি কেন্দ্রে না এসে কম দাম পাওয়া সত্ত্বেও ফড়েদের কাছে তা বিক্রি করে দিচ্ছিলেন তাঁরা।
চেকে দাম মেটানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায় প্রথম দফাতেই বেশ কয়েক হাজার চেক তৈরির উদ্যোগ নেয় খাদ্য দফতর। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রতিটি জেলায় পাঁচজন করে অফিসার চেকে সই করবেন। ওই পাঁচ অফিসারকে মনোনীত করবেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক। পরিকল্পনা মতো ওই অফিসারদের কলকাতায় এনে বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলানো হয়। এবং ধানের দাম মেটাতে জেলায় জেলায় বিশেষ অ্যাকাউন্টও খোলা হয়। যাতে ধান কেনার টাকা রাখা হচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে এই চেকগুলি তৈরি করিয়ে আনা হয়েছে। চেকের পাতায় ছাপানো অক্ষরে লেখা থাকবে কত টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে। ৪৫ কুইন্টাল ধানের সরকারি ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ যাতে ৪৫ কুইন্টালের বেশি ধান বিক্রি করতে না পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। ফড়েদের আটকাতে সর্বোচ্চ ধান কেনার পরিমাণ ৯০ কুইন্টাল থেকে ৪৫ কুইন্টাল করে দেওয়া হয়েছে।
দু’জন অফিসারের সই সহ চেকগুলি বিডিও’র মাধ্যমে ধান কেনার কেন্দ্রগুলিতে পাঠানো হচ্ছে। ক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা চাষির নাম ও টাকার পরিমাণ লিখে চেক ইস্যু করবেন। খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দিনের শেষে অবণ্টিত চেক বিডিও’র কাছে ফেরত যাবে। পরের দিন সকালে আবারও তা ক্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কত টাকার এবং কত চেক ইস্যু হল, তার বিস্তারিত হিসেব জেলাশাসকের মাধ্যমেই খাদ্য দফতরে পাঠাবেন বিডিও।