নিকাশি থেকে দূষণ- অন্যতম ভিলেন প্লাস্টিক। শহরবাসীকে প্লাস্টিক থেকে দূরে রাখতে চালু হয়েছে জরিমানা, প্লাস্টিকের ক্ষতি বুঝিয়ে চলছে প্রচারও। এবার সেই প্লাস্টিক দিয়েই রাস্তা বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হল। বিভিন্ন আবাসন থেকে থেকে সংগ্রহ করা হবে প্লাস্টিকের বাতিল সামগ্রী। পিচের সঙ্গে সেই প্লাস্টিক মিশিয়ে তৈরি হবে রাস্তা। পরিবেশ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে এমনই উদ্যোগ নিয়েছে নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ (এনকেডি)-এ।
চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের বক্তব্য, ‘পরীক্ষামূলক ভাবে ৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হবে।’ জানা গেছে, ইতিমধ্যেই নিউ টাউনের বিভিন্ন আবাসন থেকে প্রায় ১২৮ কেজি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা গিয়েছে। ৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য ৪৫০ কেজি প্লাস্টিক প্রয়োজন। সেজন্য এনকেডিএ কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ করছেন। দিন পনেরোর মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্লাস্টিক বর্জ্য জোগাড় হয়ে যাবে বলেই আশাবাদী এনকেডিএ কর্তারা। এর পরেই শুরু হবে রাস্তা তৈরির কাজ।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পিচের সঙ্গে ৩ থেকে ৫ শতাংশ প্লাস্টিক মিশিয়ে দিলে একদিকে রাস্তা যেমন মজবুত হবে, তেমনই অন্য দিকে বর্ষার সময় কম পরিমাণে জলধারণ করায় রাস্তা টেকসই হবে। সেই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিটি সেন্টার ২-এর পাশে একটি রাস্তায় প্রাথমিক ভাবে বিটুমিন ও প্লাস্টিকের মিশ্রণে রাস্তা তৈরি করা হবে এবং সেই রাস্তায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে। তাতে পাশ হলে পরবর্তী ক্ষেত্রে নিউ টাউনের বিভিন্ন রাস্তা এই পদ্ধতিতে তৈরি হবে।
অন্যদিকে নাগরিকদের প্লাস্টিকের বিকল্প জিনিস ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে চায় পরিবেশ দফতর। এর প্রাথমিক ধাপ হিসেবে সরকার পরিচালিত স্কুলগুলির পড়ুয়াদের পাটের তৈরি ব্যাগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ, বুধবার সল্টলেকের লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠের হাজারখানেক পড়ুয়াকে দেওয়া হবে ব্যাগ। পরিবেশ দফতরের যুক্তি, বাচ্চারা প্লাস্টিকের বিপদ বুঝলে বড়দের তা বোঝাতে বাধ্য করবে। তাই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আগামী প্রজন্মকে সতর্ক করতে চায় সরকার।
‘প্লাস্টিক বর্জিত জীবন, উৎসব মুখর শুভক্ষণ’— এই স্লোগানটি লেখা রয়েছে ব্যাগে। এর পাশাপাশি পড়ুয়াদের বোঝানো হবে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলি কী এবং পাটের ব্যাগ ব্যবহার কতটা উপকারী। আগামী প্রজন্মকে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা বোঝাতে না পারলে এর ব্যবহার রোখা মুশকিল। সে-কারণেই রাজ্য সরকারি উদ্যোগে স্কুলে বিন্যামূল্যে প্লাস্টিক ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে।’ প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলি আমজনতার কাছে তুলে ধরতে সরকার নানা কর্মসূচিও নিয়েছে। লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠ স্কুলের সভাপতি অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘স্কুলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্লাস্টিক বন্ধের জন্যে পড়ুয়াদের চটের ব্যাগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। পরে শুনলাম, রাজ্যের সমস্ত স্কুলেই প্লাস্টিক বিরোধী প্রচার চালাতে এই ব্যাগ দেওয়া হবে।’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘বিকল্প জিনিসের ব্যবহার না বাড়াতে পারলে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিকল্প দেওয়া হচ্ছে, সেটা ভালো।’