হিন্দী বলয়ে ধাক্কা খাওয়ার পর বছরের পয়লা দিনে প্রথমবারের জন্য সাক্ষাৎকারে হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত সাড়ে চার বছরে প্রতিপক্ষকে পাত্তা না দেওয়ার যে ভাবটা মোদীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজে দেখা যেত, তা উধাও। ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ার যে ভাবমূর্তিটা তৈরি হয়েছিল, সেটাও অতীত। মোদীর কথা-বার্তায় স্পষ্ট, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জোট যে দানা বাঁধছে, সেটা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন তিনি। এই জোটকে যে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না সেটাও তাঁর কাছে স্পষ্ট। তাই বুঝে-শুনে সৌজন্যের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন মোদী।
মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারে বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের কাণ্ডারী জানিয়ে দিলেন, ‘উনিশের লড়াই হবে জনতার সঙ্গে জোটের। মোদী তো মানুষের ভালবাসা আর আশীর্বাদের প্রতিচ্ছবি।’ প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, উনিশের লড়াই মোদী বনাম কার যুদ্ধে পর্যবসিত হতে চলেছে? তার জবাবেই এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পোড় খাওয়া রাজনীতিকের এই কথার মধ্যে কৌশলের মাত্রাটাই অনন্য। কারণ, জোটের কথা বলে মোদী বোঝাতে চেষ্টা করলেন, জোট হল, জনতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলির একটি সমষ্টি। আর জনতার প্রকৃত প্রতিনিধি তিনিই।
এ দিনের সাক্ষাৎকারে পাঁচ রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র বিপর্যয় নিয়েও প্রশ্ন করা হয় প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব ছিল না মোদীর কাছে। উত্তর কার্যত এড়িয়ে গেলেন। মণিপুর, ত্রিপুরা-সহ একাধিক রাজ্যের উদাহরণ টানলেন যেখানে নতুন করে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। বললেন, ‘বিজেপি শুধু হিন্দি বলয়ের দল নয়। ভারতের দল।’ তাহলে দক্ষিণ ভারতে কেন বিজেপির উপস্থিতি নেই? না, এই প্রশ্নেরও কোনও জবাব ছিল না তাঁর কাছে। শুধু বললেন, ‘সেখানে শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি।’
যখন তিন তালাক নিয়ে বিজেপি এত কথা বলছে তখন শবরীমালা নিয়ে গেরুয়া শিবির চুপ কেন? এই প্রশ্নের অর্ধেক জবাব দিলেন মোদী। প্রথমেই তিন তালাক নিয়ে অনেক কথা বললেন। জানালেন, কীভাবে আরব দেশগুলি এমনকি একাধিক ইসলামিক দেশে তিন তালাক বাতিল হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও শবরীমালাতে কেন মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না সেটা আর বললেন না।
রাম মন্দির নিয়েও কিছু স্পষ্ট করলেন না প্রধানমন্ত্রী। বললেন, যেদিন সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট আদেশ দেবে, সেদিনই সরকার যা করার করবে। অর্ডিন্যান্স আনবে কিনা ভাববে। অর্থাৎ মন্দির নিয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও উত্তর নেই।
বিজয় মালিয়া-সহ যে শিল্পপতিরা পালিয়ে গেলেন তাঁদের টাকা কবে আসবে জানতে চাওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু এই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর ছিল না। পালিয়ে যাওয়া শিল্পপতিরা কবে ফিরে আসবে, কীভাবে ফিরে আসবে কেউ জানে না। মোদীও জানেন না সম্ভবত, স্পষ্ট করে তাই কিছু বললেন না। মোট কথা এদিকওদিকের কথা বলে মূল প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।
সব মিলিয়ে সাক্ষাৎকারের বেশীরভাগ প্রশ্নই এড়িয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। কোনওটা অর্ধেক বললেন, আবার কোনও প্রশ্নের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিলেন অন্য কথায়। স্পষ্ট বোঝা গেল, চাপে আছেন ৫৬ ইঞ্চি ছাতির মানুষটি।