বছরের শেষটা মিষ্টিমুখেই হোক এমনটাই চাইছেন সিমলেপাড়ার নকুড় নন্দীর উত্তরপুরুষ পার্থ নন্দী ওরফে রাজা । আর সেই উদ্দেশ্যেই তিনি বানিয়ে ফেলেছেন এক নতুন ধরণের মিষ্টি, সন্দেশের কেক যার নাম সন্দেক। এখন মিষ্টিতেও ফিউশনের চল এসেছে সেই ধারা বজায় রেখেই সৃষ্টি হয়েছে কেক এবং সন্দেশের নামের সংমিশ্রণ সন্দেক।
এক যুগেরও আগে এমন সন্দেশের কেক বন্ধুপ্রতিম রসিকজনের জন্য শখ করে বানাতেন নকুড়ের ‘মেজকত্তা’ স্বর্গীয় প্রশান্ত নন্দী। সাহিত্যিক শঙ্কর তাতে মুগ্ধ হয়ে নামকরণ করেন সন্দেক। ক্রমশ বাংলার বড়সড় আনন্দের উদযাপনে যা অঙ্গাঙ্গী হয়ে উঠেছে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের আইপিএল জয় উপলক্ষেও ইডেনের সম্বর্ধনায় এমন ‘সন্দেক’ নিবেদন করেছিল নকুড় ও বলরাম। কন্যাশ্রী দিবসের জন্য ‘সন্দেক’ সৃষ্টি আবার রিষড়ার ফেলু ময়রার প্রতি বছরের দায়িত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবিও সেই কেকের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পরে দেখা গিয়েছে, ডিমবিশিষ্ট কেক মুখে তুলতে অপারগ অবাংলাভাষী ব্যবসায়ীকুল কলকাতার সন্দেকের গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছে। টায়ার ব্যবসায়ী একটি পরিবারের বিয়েতে ২০ ফুট লম্বা ৪০০ কেজির সন্দেশের কেক পৌঁছে দিতে বলরামের তিনটি ট্রাক লেগেছিল।
পশ্চিমী শৈলীতে কেক বেক করার কসরত অনেক দিনই রপ্ত করার চেষ্টা করছে বাঙালি ময়রারা। তাতেও মাত্রা যোগ হয়েছে সন্দেকে। একটু বড়সড় টার্টের আদলে সন্দেশের গায়ে ক্যারামেলাইজ়ড বা চিনি পোড়া মধুর তিক্ততা। কিংবা কেকের আইসিং বা গোলাপফুলের জায়গায় বসানো হয়েছে বেক্ড পান্তুয়ার মুকুট। কারও জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীতে অর্ডারের সময়ে ছবি দিলেও ‘ম্যাজিক’ করছেন সন্দেক স্রষ্টা। চিনির ভোজযোগ্য বা এডিব্ল ‘কালি-কাগজে’ সেই ছবির ছাপ ফুটিয়ে তুলে কেকের গায়ে বসানো হচ্ছে। বড়দিন তো বটেই ভাইফোঁটা, দিওয়ালি বা বিজয়া দশমীতেও এমন অভিনব সন্দেশের কেক বড় আকর্ষণ। বিয়ের তত্ত্বের ক্ষীরের পুতুলের মতো মডেলও এমন কেকের ডিজাইনের অঙ্গ।
কলকাতা ছাড়িয়ে জেলার মিষ্টির দোকানেও এই শীতে নিয়মিত কেকের অর্ডার হচ্ছে। আইসক্রিমের মতো টু-ইন-ওয়ান, ভ্যানিলা স্বাদের এক কেজি নলেন গুড়ের সন্দেক দামে নামী দোকানের কেকের মোটামুটি সমান সমান। আর গড়পড়তা কেক কারবারিদের সস্তার ক্রিম, স্পঞ্জের তুলনায় নিখাদ সন্দেশের কেক অনেকটাই সুস্বাদু মনে করছেন মিষ্টি রসিকেরা।
পেটমোটা চিকেন আ লা কিয়েভের বক্ষ বিদীর্ণ হতেই ভাবনাটা মাথায় খেলে যায় নকুড় নন্দীর উত্তরপুরুষ পার্থ নন্দীর। প্লেটে মাখন-স্রোতের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, এ ভাবেই নলেনগুড়ের ফল্গু উথলে উঠতে পারে না! আ লা কিয়েভের আদলে সন্দেশের ‘কেক ভাবনা’ সাকার হয়েছে। কেকের আকারের এক কেজির সন্দেশে বেশ অনেকটাই নলেনগুড় ভরার জায়গা মিলছে। সাবেক রীতির কেশর, রোজ়ক্রিম, চকলেট বা দিলখুশ সন্দেশকে মস্ত কেকের আদলে উপস্থাপনাও বাঙালির বর্ষশেষকে মাধুর্যে ভরিয়ে তুলেছে।