বৃহস্পতিবার নামখানায় প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের তরফে কোন প্রকল্প কোথায় চলছে, কোন প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে, কোন প্রকল্পের কাজ এখনও আটকে, কেন আটকে, গতকালের বৈঠকে তা নিয়েই দীর্ঘক্ষণ পর্যালোচনা করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানার ইন্দিরা ময়দানে ছিল প্রশাসনিক বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, মন্টুরাম পাখিরা, মুখ্যসচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ-সহ পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান এবং বিভিন্ন দফতরের সচিবরা।
মুখ্যমন্ত্রী গতকাল ফের বলেন, ‘অনেক প্রকল্প আছে যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সামান্য টাকা দেয়, বেশিরভাগটা দেয় রাজ্য সরকার। আমরা দিই ৮০ টাকা, কেন্দ্র দেয় মাত্র ২০ টাকা। অথচ বিজেপি সরকার বলে বেড়ায়, এসব কেন্দ্রের কল্যাণমূলক প্রকল্প। কেন্দ্র পুরো টাকাটাই নিজের বলে চালাচ্ছে। সেটা নয়, রাজ্য সরকারই এই সমস্ত অর্থের ব্যবস্থা করে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। সেটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কৃষি বিমা নিয়ে কেন্দ্রকে আর মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে দেব না।’
১০০ দিনের কাজে টাকা আটকে থাকা নিয়েও মোদী সরকারকে তোপ দাগেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শেষ দু’মাসের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। যে জন্য ১০০ দিনের কাজের টাকা অনেকেই নিয়মিত পাচ্ছেন না। রাজ্য সরকার চেষ্টা করবে সেই অর্থ পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ গরিব মানুষের বিষয়ে এতটা উদাসীন বলেই পরিস্থিতি সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে’।
তিনি জানান, ‘কেন্দ্র এখনও রাজ্যের প্রাপ্য ২৫০০ কোটি টাকা দেয়নি। কিন্তু এমন অসহযোগিতা সত্ত্বেও ১০০ দিনের কাজে দক্ষিণ ২৪ পরগণা ভাল করেছে। এ জন্য বিডিওদের পুরষ্কৃত করব।’ এরপরই ইউবিআই-এর এক প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘কৃষকদের ঋণ বাড়াতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকেও ঋণ দিতে হবে।’
সমবায় সচিব এমভি রাও জানান, অনেক জায়গায় সমবায় ব্যাঙ্ক হয়ে গেছে। যা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি থেকেও ঋণ নিন। গরিব মানুষদের জন্য ৪০ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছি। তা সত্ত্বেও দেখছি মানুষ হোগলার ঘরে থাকছেন। আবাসন যোজনা সংক্রান্ত তালিকা আমি তৈরি করব। গরিব মানুষের বাড়ি তৈরিতে কোনও ভাবেই কমিশন নেওয়া যাবে না। আর মাছচাষের জন্য যাঁরা ঋণ নিতে চাইবেন, তাঁদের সঙ্গে সমবায় ব্যাঙ্কের যোগাযোগ করিয়ে দেন।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পানীয় জলের পাইপ লাইন করে দিয়েছি। মানুষের বাড়িতে জল যাচ্ছে। কিন্তু এগুলো ভেঙে চাষের জমিতে জল দেওয়া হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। আমি জনস্বাস্থ্যর কাজে সন্তুষ্ট নই।’ আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, ‘কেন একটা প্রকল্প দিনের পর দিন ধরে চলবে? কেন নজরদারি নেই?’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, সব মেয়েরা যাতে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসে, শিক্ষাশ্রীর ক্ষেত্রে যাতে ১০০ শতাংশ কাজ হয় তা দেখতে হবে। এসসি, এসটি সার্টিফিকেট যাতে ঠিকমতো পাওয়া যায় সে দিকেও নজর রাখতে হবে। সার্টিফিকেট পেতে যেন কারো হয়রানি না হয়।