এ যেন এক অদ্ভুত সমাপতন! বড়দিনেই প্রয়াত হলেন ‘কলকাতার যীশু’। চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। যার হাত ধরে অমলকান্তিরা রোদ্দুর হতে না পারলেও রোদ্দুর হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। তার হাত ধরেই সেই শিশু সমাজের দুর্নীতিকে প্রশ্ন করতে পেরেছিল ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়?’ তবে শুধু বড়রাই নয়, তার ‘কবিতার ক্লাস’-এ অবাধ বিচরণ ছিল ছোটদেরও।
বেলজিয়ামের জর্জ রেমি টিনটিন সিরিজ শুরু করেন। যা খুবই জনপ্রিয় হয়। রেমিকে গোটা দুনিয়া হার্জ নামেই চিনতেন, টিনটিন সিরিজও তিনি এই নামেই লিখতেন। পরবর্তীকালে নীরেন্দ্রনাথ এই কমিক সিরিজটির বঙ্গানুবাদ শুর করেন। তাঁর হাত ধরেই টিনটিনের বাংলা সাহিত্যে পদার্পণ করা। তাঁর শব্দশৈলীর গুণে, বাক্যবিন্যাসে ছোটরা তো বটেই এমনকি বড়রাও মুগ্ধ হয়েছিলেন। যার রেশ আজও বর্তমান। আজও অনেক বাচ্চাই কমিক্সের প্রতি আকর্ষিত হয় টিনটিনের হাত ধরে। তাঁর এই অনুবাদ সিরিজ প্রকাশিত হত বিখ্যাত এক পত্রিকায়।
তবে অনুবাদ করলেও তিনি বজায় রেখেছিলেন তাঁর স্বাতন্ত্র্যতা। ইংরিজিতে যে ছিল স্নোয়ি, বাংলাতে সে কুট্টুস। ইংরিজির থম্পসন অ্যান্ড থমসন হল জনসন ও রনসন। ক্যাপ্টেন হ্যাডকের গালাগালি বিলিয়ন্স অ্যান্ড বিলিয়ন্স অফ ব্লু ব্লিস্টারিং বারবিকিউড বার্নাকলস নীরেনের ছোঁয়াতে হল এক্টোপ্লাজম, হিপোপটেমাস ইত্যাদি। তাঁর লেখনীর গুণ এতটাই ছিল যে টিনটিন পড়ার পর হার্জের ঠিকানা জোগাড় করে চিঠিও লিখত অনেকে।
সেই রুপকথাময় শৈশব আজকের এই ডিজিটাল দুনিয়ায় দেরাজে তুলে রাখা মরচে পড়া তোরঙ্গের মত বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু কখনও কখনও এমন সময় আসে, যখন সেই তোরঙ্গ খুলতে হয় আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসে টিনটিনের দুষ্টুমি মাখা সারল্যের দিনগুলো। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মেঘের দেশে চলে গেলেও আগামীর জন্যে সাজিয়ে রেখে গেলেন এক অপাপবিদ্ধ শৈশব।