সাত পাকে বাঁধা পড়া হয়নি। কিন্তু মৃত্যুর পরেও এক ওড়নাতেই বাঁধা রইলেন তাঁরা। এক মুহূর্তের জন্যেও আলাদা হতে দিলেন না পরস্পর পরস্পরকে। হ্যাঁ একসঙ্গে শুধু গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়াই নয়। ঝাঁপ দেওয়ার আগে একে অন্যকে ওড়না দিয়েই বেঁধে রেখেছিলেন সুজাতা ও অভিষেক। যা দেখে পুলিশ-সহ এলাকার বাসিন্দাদের ধারণা, মৃত্যুর আগের মুহূর্তেও যাতে একে অন্যকে ছেড়ে আলাদা না হয়ে যেতে হয়, তাই নিজেদের তাঁরা বেঁধে রেখেছিলেন।
রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ জানায়, একটি ছেলের দেহ গঙ্গায় উপুড় হয়ে ভাসছে খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে লঞ্চ নিয়ে তারা পৌঁছে যায় মেটিয়াবুরুজের নেতাজি সুভাষ ডকের কাছে। কিন্তু দেহ তুলতে গিয়ে পুলিশ দেখে উপুড় হয়ে থাকা ছেলেটির দেহের নিচে চিৎ হয়ে ভাসছে একটি মহিলার দেহ। দুটি দেহই বাঁধা একটি ওড়না দিয়ে। যার ফলে পুলিশেরও সুবিধা হয় একই সঙ্গে ওই মৃতদেহ দু’টিকে খুঁজে পেতে।
তদন্তকারীরা জানান, দেহ উদ্ধারের সময়ে তাঁরা দেখেন এক জনের কোমরের সঙ্গে অপর জনের কোমর ওড়না দিয়ে বাঁধা রয়েছে। সোমবার দেহ মেলার পরে এক পুলিশকর্মী জানান, সাধারণত দু’জন একসঙ্গে ঝাঁপ দিলে দেহ এক সঙ্গে কখনওই পাওয়া যায় না। এঁরা নিজেদের বেঁধে নিয়েছিলেন বলেই এক সঙ্গে দু’জনের দেহ উদ্ধার করা গেল।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৮ তারিখ হাওড়াগামী লঞ্চ থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেয় ওই যুগল। উত্তর বন্দর থানার পুলিশ পরে লঞ্চ থেকে সুজাতার ব্যাগটি উদ্ধার করে। যার মধ্যে মেলে বেশ কিছু কাগজপত্র ও প্রেসক্রিপশন। ওই প্রেসক্রিপশনগুলি থেকেই জানা যায় সুজাতার ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। সামনে আসে সুজাতা ও অভিষেকের প্রেমের সম্পর্কের কথাও।
এর পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সুজাতা মস্তিষ্কের ক্যানসারে ভুগছিলেন। কিন্তু ক্যানসার এমন পর্যায়ে ছিল যে চিকিৎসাতেও আর সারবে না বলেই জানতে পেরেছিলেন সুজাতা ও তাঁর প্রেমিক অভিষেক। তাই একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয় জেনেই দু’জনে ওই দিন বাড়ি থেকে বেরোন এবং লঞ্চে উঠে ঝাঁপ মারেন। এর পর থেকেই দু’জনের খোঁজে একাধিক বার তল্লাশি চলে গঙ্গায়। অবশেষে সোমবার দু’টি দেহ উদ্ধার হওয়ার পর পুলিশ নিশ্চিত হয় দেহ দু’টি সুজাতা বাজপেয়ী এবং অভিষেক সাউয়ের।