‘আগুন নিয়ে খেলবেন না। কার কী ওষুধ আমরা জানি।’ বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের সভামঞ্চ থেকে ঠিক এই ভাষাতেই বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
গতকাল সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই গেরুয়া শিবিরকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে গেলেন তিনি। ক্ষুব্ধ অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘পুরুলিয়ায় এবার কোনও তৃণমূল কর্মী খুন হলে বিজেপি–র জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর বাড়ি ঘেরাও করা হবে। আমি কলকাতা থেকে এসে আপনাদের সঙ্গে শামিল হব।’ বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে গতকাল আবারও ব্যঙ্গ করে অভিষেক বলেন, ‘গাধাকে দেখিয়ে বলা হচ্ছে ঘোড়া। বাস দেখিয়ে বলা হচ্ছে রথ। যে রথে ফুর্তির সমস্ত ব্যবস্থা আছে। মুখে হিন্দু হিন্দু বলে বড়াই করে ওরা, কিন্তু ৫ রাজ্যের হিন্দুরাই এখন ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর পুরুলিয়ার বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপি দখল করলেও, উন্নয়নের স্বার্থে ওই জয়ীরা অভিষেকের হাত ধরে যোগ দিলেন তৃণমূলেই। গতকাল মৌতোড় ফুটবল ময়দানেই তাঁদের হাতে পতাকা তুলে দিলেন অভিষেক। বিজেপির ওই ৮ সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ফলে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতিরও দখল পেল তৃণমূল।
এরপরই বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে পুরুলিয়ায় আমাদের দলের একের পর এক কর্মী-সমর্থকদের খুন করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুরুলিয়ার এই রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকাতেই আমাদের দুজন কর্মী খুন হয়েছেন। আমি আজ আমাদের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলে যাচ্ছি, এবার পুরুলিয়ায় যদি আমাদের আর একজনও খুন হয়, তাহলে যে এলাকায় খুন হবে সেই এলাকার মণ্ডল সভাপতি ও বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগরের বাড়ি ঘেরাও করা হবে। প্রয়োজন পড়লে আমি কলকাতা থেকে আসব। কত ধানে কত চাল এবার দেখবে।’
এখানেই না থেমে অভিষেক আরও বলেন যে, ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না। কার কী ওষুধ আমরা জানি। বিজেপি আমাদের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ করেন। তাঁদেরকে বলি, আমরা তোষণের রাজনীতি করি না। আমরা উন্নয়ন বুঝি। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে উন্নয়নে এক নম্বর বাংলা। যা প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তার ১০০ শতাংশ কাজই করেছেন বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আমরা আরও উন্নয়ন করতে পারতাম, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি পদে বাধা দিচ্ছে।’
বৃহস্পতিবারের জনসভায় মানুষের ঢল দেখে তৃণমূলের সর্বভারতীয় যুব সভাপতির গলায় ঝরে পড়ে আত্মবিশ্বাস। সভাস্থলে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এই পুরুলিয়ার মানুষই ব্রিগেড ভরিয়ে দিতে পারবে।’ কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে তাঁর ভোকাল টনিক, ‘আমাদের হাতে জোড়াফুলের ঝান্ডা, আর দিল্লীতে হবে ভারতীয় জনতা পার্টি ঠান্ডা। আমাদের চোখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ, আর দিল্লীতে হবে ভারতীয় জনতা পার্টি নিঃস্ব। আগামী দিন ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। আগামী দিন ২০১৯-এ রায় দেবে জনতা, উড়ে যাবে ভাওতা, জিতবে সততা, জিতবে মমতা।’
সভার একেবারে শেষ লগ্নে অভিষেকের স্লোগান, ‘২০১৯ বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও।’ তাঁর সঙ্গে গলা মেলান উচ্ছ্বসিত জনতাও।