‘প্রধানমন্ত্রী কি জানেন না যে, সংবিধানে আর্টিকল নম্বর ২৭৯এ অনুযায়ী জিএসটি কাউন্সিল সাংবিধানিক সংস্থা?’ কাউন্সিলের বৈঠকের আগেই কোন কোন জিনিসের ওপর জিএসটি কমবে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যের সমালোচনা করে এমন প্রশ্নই তুললেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আগামী ২২ ডিসেম্বর, শনিবার যেখানে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে, সেখানে কাউন্সিলকে এভাবে অবমাননা করে মোদী বক্তব্য পেশ করায় ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২২ ডিসেম্বর কাউন্সিলের বৈঠকে উপস্থিত থেকেই এর প্রতিবাদ করবেন।
প্রসঙ্গত, ১৮ ডিসেম্বরই প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, ০.৫ থেকে ১ শতাংশ দ্রব্যের ওপর জিএসটি নেওয়া হবে। বিশেষ করে বিলাসবহুল দ্রব্য, যেমন এয়ারক্রাফট, সিগারেট, অ্যালকোহল এবং এসইউভি গাড়ির ওপরেই ২৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হবে। মোদীর এমন বক্তব্যের পরেই বৃহস্পতিবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠক করে অমিত বাবু বলেন, জিএসটি কাউন্সিল একটি সাংবিধানিক সংস্থা। সেখানে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই কী করে প্রধানমন্ত্রী দাম কমানোর কথা ঘোষণা করেন! সংবাদমাধ্যম মারফত জেনেছি, সিগারেট, বিমান, অ্যালকোহল এবং এসইউভি গাড়ির কর কাঠামো ২৮ শতাংশ থাকবে। বাকি সব হয়ে যাবে ১৮%। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কি জানেন না অ্যালকোহল জিএসটির আওতায় ছিলই না। এ নিয়ে কাউন্সিলে কোনও দিন আলোচনাই হয়নি।
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, যখন লোকসভার অধিবেশন চলে, তখন প্রধানমন্ত্রী কেন, কেউই লোকসভার বাইরে দাঁড়িয়ে কোনও বিবৃতি দিতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা ২৭৯এ ধারার বিরোধী। তাঁর অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রী কি জানেন না যে, সংবিধানে আর্টিকল নম্বর ২৭৯এ অনুযায়ী জিএসটি কাউন্সিল সাংবিধানিক সংস্থা? সুতরাং কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই বাইরে বিবৃতি দেওয়ার অর্থ সেই সংস্থার অধিকারকে খর্ব করা। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী যদি কোনও বিষয়ের ওপর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন, তা হলে সেটাকে কি দেশের অর্থমন্ত্রী খন্ডন করতে পারেন? তাহলে জিএসটি কাউন্সিলের এই বৈঠক ডাকার মানে কী?’ বৈঠকের ৩ দিনে আগেই সিদ্ধান্তের কথা বাইরে জানিয়ে দেওয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন অমিত বাবু।
প্রধানমন্ত্রীর এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে বিরক্ত অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের অগাস্ট মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী কাউন্সিলকে আমি একটি চিঠি লিখেছিলাম। সেই চিঠিতেই রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, অর্থ যে সব বিষয়ের সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে, সেই সব জিনিসের ক্ষেত্রে জিএসটি ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা হােক। এমনকি সিমেন্টের ক্ষেত্রেও জিএসটি কমাতে বলা হয়েছিল। যাতে নাগরিকদের ওপর বাড়ি তৈরি করার সময় কোনও বাড়তি বােঝা না চাপে। তার আগে ২০১৭ অক্টোবরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছেও রাজ্যের তরফে আবেদন জানানাে হয়েছিল, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ থেকে জিএসটি কমিয়ে ১৫ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে রাখা হােক। কেন্দ্র তখন রাজ্যের সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি। তবে যে আবেদন রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে রেখেছিল সেই সিদ্ধান্তটাই প্রধানমন্ত্রী এখন নিচ্ছেন।’