বিমুদ্রাকরণের পর ২,০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট ছাপানো সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করলে তা কি ভাবে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করতে পারে, তা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে আরবিআই-এর নোট মুদ্রণ সংস্থা। এ কথা জানিয়ে ফের রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে একহাত নিল সেন্ট্রাল ইনফর্মেশন কমিশন (সিআইসি)।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় হঠাতই সবাইকে চমকে দিয়ে পুরোনো ৫০০ টাকা এবং ১,০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের নগদ ব্যবস্থায় থাকা ৮৬ শতাংশ নোটই ৫০০ এবং ১,০০০ টাকায় ছিল, যা কেন্দ্রের এক সিদ্ধান্তেই বাতিল হয়ে যায়। তার জায়গায় নতুন ২,০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট আনা হলেও তার ঠিকঠাক জোগান না থাকায় এটিএমগুলি খালি থাকার পাশাপাশি নগদের প্রয়োজনে ব্যাঙ্কগুলির সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হন গ্রাহকরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৬-র ৯ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কটি কত ২,০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট ছাপিয়েছিল তা জানতে চেয়ে তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন জানান হরবিন্দর ধিঙ্গড়া নামক জনৈক ব্যক্তি। কিন্তু, আবেদনের সদর্থক জবাব না মেলায় সেন্ট্রাল ইনফর্মেশন কমিশনের দ্বারস্থ হন তিনি।
এরপরই সিআইসি বিষয়টি আরবিআই-এর নোট মুদ্রণ সংস্থার কাছে পাঠালে তারা জানায়, ‘নোট ছাপানোর বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয় এবং ভিন্নধর্মী’ এবং নতুন নোটের বৈশিষ্ট্য, কাঁচামাল, ছাপানো, মজুত আর তা পরিবহণ সংক্রান্ত তথ্যগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তথ্য কোনও মতেই সাধারণকে জানানো সম্ভব নয়। তা হলে নোট বাতিলের উদ্দেশ্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমস্যার তৈরি হবে।
এখানেই শেষ নয়। নয়া নোট সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ পেলে তা নাকি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং একতার পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে এবং এর ফলে দেশের সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের উপর প্রভাব পড়তে পারে। সেই কারণেই তথ্যের অধিকার আইনের ৮ (১) (এ) ধারা অনুযায়ী এ ধরনের তথ্য প্রকাশ সম্ভব নয় বলে জানায় আরবিআই-এর নোট মুদ্রণ সংস্থা।
বিষয়টি নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নোত্তরের বিষয়টি ইনফর্মেশন কমিশনার সুধীর ভার্গব দেখভাল করছিলেন। আরবিআই-এর যুক্তি খারিজ করে তিনি বলেন, ‘দৈনিক কত নোট ছাপানো হয়েছিল সেই তথ্য এতটাও সংবেদনশীল নয় যার জন্য তথ্যের অধিকার আইনের ৮ (১) (এ) ধারাকে হাতিয়ার করতে হয়। কারণ গোটা বিষয়টাই পুরোনো ঘটনা সম্পর্কিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘নোট ছাপানোর তথ্য প্রকাশ করলেই তার সঙ্গে কাঁচামাল, মজুত এবং পরিবহণ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পেয়ে যাবে এমনটা নয়। তাছাড়া, এই তথ্য প্রকাশ করা হলে তা কি ভাবে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করবে তা ইনফর্মেশন কমিশন নিশ্চিত করতে পারছে না।’
প্রসঙ্গত, এর আগে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে তীব্র ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছিল সিআইসির। আর এবার নোট ছাপানোর ইস্যু নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নোত্তর পর্বের পর সিআইসির তরফে তাদের ঘাড়ে চাপল ব্যর্থতার দায়।