সদ্য শেষ হওয়া ৫ রাজ্যের বিধাসসভা নির্বাচনে কৃষি ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতিকে ব্যালটের লড়াইয়ে জেতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে দেখে এবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভোটের মুখে কৃষকদের ঋণ মকুব করতে গিয়ে আদতে দেশের অর্থনীতিরই চরম ক্ষতি করা হচ্ছে। ভোটের আখের গোছাতে গিয়ে অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার চাকায় লাগাম পরানো হচ্ছে।
রাজনের মতে, প্রথমত ওই ঋণ অনেক সময়ই গরিব কৃষকদের কাছে পৌঁছয় না। কারণ, স্রেফ দরিদ্র হলেই যে কৃষকরা ঋণ পান তা নয়। আসলে উপরমহলের সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ ভাল, ‘বাছাই’ করা সেই কজনই তা পান। ফলে তার উপরে যদি সেই ঋণ শোধই না হয়, তা হলে বিপদে পড়ে ব্যাঙ্ক। মাথাচাড়া দেয় ঘাটতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা। দীর্ঘ মেয়াদে তার খারাপ প্রভাব পড়ে কৃষির লগ্নির উপরেও।
তাই রাজন মনে করেন, ‘ভোটের মুখে তড়িঘড়ি কৃষকদের ঋণ মকুব করার প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী ইস্তেহারে দেওয়া উচিত নয় রাজনৈতিক দলগুলির।’ তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। আর্জি জানিয়েছেন, বিষয়টিকে আলোচনার চৌহদ্দিতেই আসতে না দেওয়ার।
ভারতের মতো কৃষিনির্ভর দেশে গত ৫ বছর ধরেই ভোটের আসরে বাজিমাত করতে কৃষকদের ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দৃষ্টান্ত কম নেই। ক’দিন আগে হয়ে যাওয়া ৫ রাজ্য বিধানসভার ভোটেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। ওই ৫ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস-সহ আরও কয়েকটি দল তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে কৃষিঋণ মকুব ও ফসলের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে না ঘোষণার পরেই সেই পথে হেঁটেছেন কমল নাথ।
এ প্রসঙ্গে রাজন বলেন, ‘ওই সব প্রতিশ্রুতিকে ভোটের প্রচারের বাইরে রাখার কথা অনেক দিন ধরেই বলছি। চিঠিও লিখেছি নির্বাচন কমিশনকে। বুঝি, কৃষকদের দুর্দশা নিয়ে ভাবার কারণ রয়েছে যথেষ্টই। কিন্তু এটাও ভেবে দেখতে হবে, শুধু ঋণ মকুব করলেই কি কৃষকদের যাবতীয় দুর্দশা দূর হবে? দেশের মোট কৃষকের কত জন বা কত শতাংশ ওই ঋণ পান? তা খুব সামান্যই হবে।’ তাঁর দাবি, এমন সিদ্ধান্তে নষ্ট নয় ঋণ শোধের অভ্যাস।