বর্তমানের সুসজ্জিত বাইপাস ঠিক যেন বিদেশ। এতটাই সৌন্দর্যে ভরপুর। মূলত বাইপাসের দক্ষিণ প্রান্ত এখন কলকাতার অন্যতম সাজানো-গোছানো জায়গা। বৈষ্ণব ঘাটা কিংবা পাটুলি উপনাগরী পরিকল্পনা ভিত্তিক তৈরি হলেও এখন শুধু পাটুলি নয়, রুবি মোড় থেকে কামালগাজি উড়ালপুল পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার জুড়ে ই এম বাইপাসের দু’পাশ এখন সম্পন্ন শ্রেণির নয়া বসত।
বৈষ্ণবঘাটা- পাটুলি উপনগরীটি গড়ে উঠেছিল কুড়ি-পঁচিশ বছর আগের বাম জমানায়। বাম আমলে তেমন কিছুই উন্নতি হয়নি ওই এলাকার। রাস্তাঘাট নালানিকাশি ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন অসুবিধায় নাকাল হতেন এলাকার বাসিন্দারা। যদিও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিস্তর অভিযোগ জানালেও সুফল পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের হাল ধরার পর।
পাটুলি উপনগরীর এই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১০১ এবং ১১০ ওয়ার্ডের অন্তর্গত। যে ঝিলপাড়ের এলাকায় জমা জল, জঞ্জাল ফেলার সমস্যা ছিল বিস্তর এখন রূপ বদলে সেই এলাকাই ঝকঝকে নতুন। হয়েছে আট লেনের প্রশস্ত ইস্টার্ন বাইপাস, ভাসমান বাজার, বেণুবনছায়া উদ্যান, সৌন্দর্যায়িত ঝিলপাড়, প্রবীণদের বসার ব্যবস্থা- সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে হওয়া এই নয়া চেহারাতে বাইপাসের দক্ষিণ প্রান্ত হয়ে উঠেছে অত্যন্ত মনোরম। উল্লেখ্য প্রথম সারির আবাসন নির্মাতারা ফ্ল্যাট তৈরির ক্ষেত্রে এই এলাকাকেই পছন্দের তালিকার প্রথমে রাখছেন।
কলকাতা পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী জানান, আগে রাস্তায় ছিল টিউব এবং ফিলামেন্ট বাল্ব। এখন সোডিয়াম ভেপার এবং এলইডি আলো। এলাকায় ছিল ছয়টি খোলা ভ্যাট সেখানে এখন কম্পাক্টর। ওই ছটি ভ্যাটের পাঁচটিতেই গড়ে উঠেছে সুসজ্জিত পার্ক। কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, রুবি মোড়ের ক্রসিং-এ গড়ে উঠতে চলেছে একটি বড় আন্ডারপাস। পাটুলিতেও গড়ে উঠবে এলিভেটর-সহ একটি রোড ওভারব্রিজ।
তিনটি প্রকল্পের জন্যই এলাকাটির চিত্রটা আমূল বদলে গিয়েছে। মেট্রো সম্প্রসারণে এই এলাকাটি পেয়েছে তিনটি স্টেশন। কবি নজরুল, ক্ষুদিরাম এবং কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন। ট্রেনেও দ্রুত যাওয়া যায় শিয়ালদহ হয়ে অন্যত্র। নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মীয়মাণ মেট্রো রুটেরও চারটি স্টেশন এখানে। পাটুলি থেকে কামালগাজি হয়ে গোবিন্দপুর পর্যন্ত এগিয়েছে বাইপাস। ফলে রুবি থেকে কামালগাজি ছাড়িয়ে রাজপুর পর্যন্ত এলাকা জুড়ে অসংখ্য রিয়েল এস্টেট। তা ছাড়া, এই পথেই রুবি, ডিসান, ফর্টিস, আর এন টেগোর, পিয়ারলেস, মেডিকা, এএমআরআই-র মতো আধ ডজনের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল। সব মিলিয়ে পরিকাঠামোর উন্নতিও লক্ষণীয়।
সাজানো উপনগরী, আধুনিক পরিকাঠামো সবই রয়েছে সল্টলেক, নিউ টাউনেও। কিন্তু এই এলাকাটিতে আধুনিক পরিকাঠামোর সঙ্গে এখনও রয়েছে সাবেক কলকাতার পাড়ার ধারণা। যাতে স্বস্তি পান বোধিসত্ত্ব মজুমদার, সমরেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মতে, এখনও এলাকাটিতে বেশ কিছু ফাঁকা জায়গা এবং গাছগাছালি থাকায় পরিবেশ দূষণের দিক থেকেও অনেকটা স্বস্তি।