মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ পেয়েই তড়িঘড়ি মুড়িগঙ্গার নাব্যতার সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী রাজ্য। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী জানুয়ারিতে হওয়া গঙ্গাসাগর মেলার আগেই ১২০ কোটি টাকা খরচে ড্রেজিং করে আড়াই মিটার নাব্যতা বাড়ানাে হবে মুড়িগঙ্গার।
জানা গেছে, প্রায় ১৪০০ মিটার এলাকা জুড়ে করা হবে এই ড্রেজিং। এর ফলে দিনের যে কোনও সময় লঞ্চ, ভেসেলে চড়ে পৌঁছনো যাবে সাগরদ্বীপে। এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা, ড্রেজিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়েছে সেচ দফতরের। মঙ্গলবার কাকদ্বীপে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এই কাজের দায়িত্ব তুলে দেন ড্রেজিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে। সৌমেন বাবু জানান, ‘সাগর মেলার জন্য আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে পলি তােলার কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাগরদ্বীপে সরকারি ভাবে মেলা শুরু হবে ওই দিনই। চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।’
মন্ত্রী ছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা খাতুন, সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা, সেচ দফতরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচীব নবীন প্রকাশ। চুক্তি প্রসঙ্গে নবীন বাবু বলেন, ‘শুধু মেলাকে লক্ষ্য রেখে ড্রেজিং হচ্ছে না। ২০২০ সাল থেকে ২৪ ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা চালু হবে। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে কেন্দ্রীয় সংস্থা এই কাজ চালিয়ে যাবে।’ জানা গেছে, আগামী ৭ বছর সংস্থাটি এই নদীপথ লঞ্চ ও ভেসেল পরিষেবার উপযুক্ত রাখবে।
সাগরমেলার দায়িত্বে থাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন। পলি তােলার জন্য জেলা পরিষদকে তাই প্রতি বছর রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দও করে। তবে মুড়িগঙ্গার পলি বেশ কয়েক বছর ধরেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে। এমনিই প্রতিদিন ভাটার সময় প্রায় তিন ঘণ্টা লঞ্চ, ভেসেল পারাপার বন্ধ রাখতে হয়। গঙ্গাসাগর মেলায় লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীর সমাগম হয়। সেই সময় সমস্যা আরও বাড়ে। লঞ্চ চলাচল জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করায় সমস্যায় পড়েন পূণ্যার্থীরা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে থাকতে হয় তাঁদের।
সম্প্রতি গঙ্গাসাগর সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে বিষয়টি আসতেই তিনি দ্রুত এই সমস্যার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, জেলাপরিষদ নয় এবার থেকে সেচ দফতরই পলি তােলার ব্যবস্থা করবে। যেমন কথা তেমন কাজ। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই মুড়িগঙ্গার পলি তােলার উপর সমীক্ষার জন্য ওয়েবকক্স নামে এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দায়িত্ব দেয় সেচ দফতর। ৮০ শতাংশ পুণ্যার্থীই লট আট দিয়ে গঙ্গাসাগর মেলায় যান। তাই সমীক্ষকরা ওই ১৪০০ মিটার এলাকায় পলি তোলার কাজ সম্পন্ন করে মুড়িগঙ্গার গভীরতা আড়াই মিটার বাড়ানোর সুপারিশ করেন। বাকি ২০ শতাংশ পুণ্যার্থী নামখানা দিয়ে সাগরদ্বীপে পোঁছন। সে পথে পলির সমস্যা ততটা বেশি নয়।