উত্তর-পূর্বের একমাত্র রাজ্য মিজোরাম, যেখানে এখনও টিকে ছিল কংগ্রেসের সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত অক্ষত রইল না সেই গড়। মধ্য ও পশ্চিম ভারতে দুর্দান্ত ভাবে ফিরে এলেও দেশের উত্তর-পূর্বের শেষ দুর্গ হাতছাড়া হল কংগ্রেসের। মিজোরামে ম্যাজিক ফিগারের থেকেও বেশি আসন পেয়ে জয়ী হল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ( এমএনএফ)। তারা পেল মোট ২৬ আসন, যেখানে ম্যাজিক ফিগার ২১। কংগ্রেস ৫, বিজেপি ১ এবং অন্যান্যরা পেয়েছে ৮ আসন।
আজ দিনের শুরুতেই ভোটগণনার প্রাথমিক গতিপ্রকৃতি দেখে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কংগ্রেসের হাত থেকে মিজোরামের দখল নিচ্ছে এমএনএফ। এমনকি বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছিল কংগ্রেসকে ভালই বেগ দেবে তারা। কিন্তু সেই সমীক্ষায় ছিল ত্রিশঙ্কু ফলাফলের পূর্বাভাস। সেই পূ্র্বাভাসকেও ছাপিয়ে একক ভাবে উত্তর পূর্ব ভারতের এই রাজ্যের দখল নিল কেন্দ্রে বিজেপির জোটসঙ্গী এমএনএফ।
২০১৩ সালে পঞ্চমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন কংগ্রেসের লাল থানহাওলা। ২০০৮ থেকে টানা দশ বছর তিনিই ক্ষমতায়। এই নির্বাচনে জিতে ষষ্ঠবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়ার হাতছানি ছিল তাঁর সামনে। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দিল জোরামথঙ্গার দল। সরছিপ আর চাম্ফাই-দক্ষিণ, এই দু’টি কেন্দ্রেই হারলেন থানহাওলা। ১৯৮৪ সাল থেকে সরছিপ কেন্দ্রে লড়ছেন তিনি। এই আসন থেকে মোট সাতবার জিতে মিজো বিধানসভায় গিয়েছেন তিনি। শুধু মাত্র ১৯৯৮ সালে প্রবল কংগ্রেস বিরোধী হাওয়ায় এক বারের জন্য হারতে হয়েছিল তাঁকে।
২৮ নভেম্বর মিজোরাম বিধানসভার নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০ শতাংশ। মদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং উন্নয়ন, এই দু’টি বিষয় হয়ে উঠেছিল এই নির্বাচনের প্রধান ইস্যু। লাল থানহাওলার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার মদ পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ছিল। সেই জন্য বিশেষ পারমিট ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত মদ্যপানে সম্মতি দিয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার।
অন্যদিকে, মদ নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিল এমএনএফ। তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে একই দাবি রেখেছিল মিজোরামে অত্যন্ত প্রভাবশালী খ্রিস্টান চার্চ। মিজোরামের ৮৭ শতাংশ মানুষই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। মদ নিষিদ্ধ করতে খ্রিস্টান চার্চের এই অবস্থান বিধানসভা নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পূর্ব আইজল(১) আসনে জিতছেন এমএনএফ সভাপতি এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জোরামথঙ্গা। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। অর্থাৎ দশ বছর পর ফের ক্ষমতায় ফিরছেন তারা।