নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হওয়া ও সমাজে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের সচেতন করতেই গোটা রাজ্যে তৈরি হয়েছে কন্যাশ্রী ক্লাব। বাদ যায়নি পুরুলিয়াও। ২০টি ব্লক মিলিয়ে ইতিমধ্যেই ২৮৭টি কন্যাশ্রী ক্লাব গঠিত হয়ে গেছে সেখানে। চলছে আরও ক্লাব তৈরির কাজ।
নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন জোর করে পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের নবমী বেসরাকে বিয়ে দিয়ে দেয় বাবা-মা। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে চলে অত্যাচার। মানবাজার ব্লকের রেণুকা মাজি, আড়াডাঙা গ্রামের প্রিয়াঙ্কা বাউরিও একইভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। তবে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে এসে এরা সকলেই এখন স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশোনা করছে।
অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিকে জয় করে এঁদের মতো আরও অনেকেই এখন মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাইছে। তাঁদের কেউ হতে চায় নার্স, কেউ আবার ডাক্তার। কন্যাশ্রী ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওঁরা এখন অন্যান্য সহপাঠীদেরও সচেতন করছে। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সুপরামর্শ দিচ্ছে।
আবার হরিমতি গার্লস হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির কিরণ বাউরিও নিজে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে সহপাঠীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে দিচ্ছে। পুরুলিয়া ২ ব্লকের ধুরহি গ্রামের বাসিন্দা কিরণ বলে, ‘গ্রামে আমার বয়সি অনেকেই ন্যাপকিনের বদলে কাপড় ব্যবহার করত। আমি বোঝানো সত্ত্বেও শুনল না। তাই আমি নিজের পয়সা দিয়েই ন্যাপকিন কিনে দিচ্ছি গত এক বছর ধরে।’
পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলোকেশপ্রসাদ রায় কিরণকে দিয়েই ন্যাপকিন ব্যবহারের সচেতনতা গড়ে তুলতে উদ্যোগী। তিনি বলেন, ‘ন্যাপকিনের ব্যবহার নিয়ে সচেতনহার হার কম। একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে মাত্র ১৫ শতাংশই তা ব্যবহার করে। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। সেই কারণে প্রতিটি স্কুলে মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে দু’টি ন্যাপকিন বিক্রি করা হবে।’
তিনি জানান, ‘পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি জায়গায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। জেলাশাসকের দফতরে মেশিন বসিয়ে ন্যাপকিন তৈরির ইউনিট কাজ করছে।’
ইতিমধ্যেই জেলাপ্রশাসনের উদ্যোগে পুরুলিয়া জুড়ে নতুন প্রকল্প ‘উড়ান’-এর কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজে সাহায্য করছে ইউনিসেফ। পুরুলিয়ায় কন্যাশ্রী কিশোরীদের নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় ইউনিসেফের কান্ট্রি হেড মহম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘কিরণের মতো সাহসী মেয়েরাই দিশা দেখাবে আরও অনেক মেয়েকে।’