এখন আর স্রেফ রাজ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বুলন্দশহরের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরগরম জাতীয়-রাজনীতি। ফাঁদ পেতে সুপরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে বুলন্দশহরের সায়ানা থানার এসএইচও সুবোধ কুমার সিংকে, এই সন্দেহই আরও জোরালো হল নতুন একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই।
ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিংয়ের পাশাপাশি গোরক্ষকদের হাতে মরতে হয়েছে স্থানীয় যুবক সুমিতকেও। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বজরং দলের যোগেশ রাজ বৃহস্পতিবারই এক ভিডিওর মাধ্যমে দাবি করেছিল যে, সে অপরাধী নয়। শুক্রবারই প্রকাশ্যে এল বুলন্দশহরের ঘটনা নিয়ে একটি নতুন ভিডিও। যেখানে আরও এক অভিযুক্তের খোঁজ পাওয়া গেল।
নতুন ভিডিওটি ঘটনার দিন, ৩ ডিসেম্বরেরই। তাতে নিহত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে উত্তপ্ত জনতাকে উস্কানি দিতে দেখা গিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতা শিখর আগরওয়ালকে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, সায়ানার যুব বিজেপি সভাপতি শিখর সুবোধকে দেখিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন, ‘এই সেই অফিসার যিনি আমাদের চিংড়াবাথি থানায় গরুর লাশ দেখাতে দিতে চাননি। গোহত্যার মামলা নিতে চাননি।’ এর পাশাপাশি সুবোধকে ‘দুর্নীতিগ্রস্থ’, ‘মুসলিম দরদী’ আখ্যা দিয়ে, তাঁকে এবং তাঁর সহকর্মীদের প্রাণে মারার হুমকিও দেন এই যুব বিজেপি নেতা!
পুলিশ অফিসার খুনের মামলায় ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের হচ্ছে অভিযুক্ত শিখরের নামে। যদিও বেপরোয়া এই যুব নেতা প্রকাশ্যেই দাবি করেন, গোটা ঘটনার জন্য দায়ী নিহত ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিং নিজেই! তাঁর নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে শুনে তিনি বলেন, ‘ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিং নিজেই গোটা পরিস্থিতির জন্য দায়ী। কারণ তাঁকে আগেই সাবধান করা হয়েছিল। সকলেই চিংড়াবাথি পুলিশ পোস্টে মৃত গরুদের দেহাংশ নিয়ে এসেছিলেন, গোহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে।’
অন্যদিকে, সেদিনের ঘটনায় একাধিক ভিডিওতেই দেখা গিয়েছে শ্রীনগরে কর্মরত জিতু ফৌজি নামের এক সৈনিককে। সেদিন সুবোধের ওপর জিতুই সম্ভবত গুলি চালিয়েছিল। তাতেই প্রাণ যায় ওই পুলিশ ইন্সপেক্টরের। ইতিমধ্যেই তাঁর খোঁজে জম্মু-কাশ্মীর রওনা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি দল। যদিও আশ্চর্যের বিষয়, জিতুর মা রতন কৌর ভিডিওগুলি দেখে নিজের ছেলেকেই চিনতে অস্বীকার করেছেন! তবে তাঁর কাকিমা চন্দ্রাবতী জানান, ‘ও সেদিন ওই ঝামেলা থেকে ফিরে এসে আমাদের বলল, এবার কেমন নাটকটা হয় দেখো শুধু। এরপরই সন্ধ্যাবেলা কার্গিল চলে গেল জিতু।’
সবমিলিয়ে বুলন্দশহরের ঘটনায় বজরং দলের পাশাপাশি এবার অস্বস্তি বাড়ল গেরুয়া শিবিরেরও। কারণ যোগেশ রাজের পাশাপাশি বিতর্কের শিরোনামে এখন বিজেপি নেতাও। একইসঙ্গে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটির ঘটনাটি তো রয়েছেই। ফলে এরপর কোন দিকে নাটকীয় মোড় নেয় বুলন্দশহর কান্ড, ঘটনার দিনের আরও কোনও ভিডিও প্রকাশ্যে আসে কিনা, সেদিকেই চোখ রাখছে গোটা দেশ।