বুলন্দশহরে পুলিশ অফিসার খুনের ঘটনার চেয়ে গোহত্যা নিয়েই বেশি চিন্তিত প্রশাসন। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, সামনে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তে উঠে এসেছে, গোহত্যা নিয়ে হাঙ্গামা বাধানোর জন্য রীতিমতো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, ৩ ডিসেম্বর চিংড়াবাথি গ্রামের যে প্রাথমিক এবং জুনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের কাছে ঘটনাটি ঘটেছিল, ঘটনার দিন সেখানে অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি স্কুলের প্রায় ১৫০ ছাত্র-ছাত্রীকে মিড-ডে মিল খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল রোজকার নির্ধারিত সময়ের সওয়া ঘন্টা আগেই। অন্যান্য দিন যেখানে খাবার দেওয়া হয় সাড়ে ১২ টায়, সেদিন খাবার চলে আসে সকাল ১১টা ১৫ নাগাদই।
যিনি মিড-ডে মিলের খাবার রাঁধেন, সেই রাজপাল সিং জানিয়েছেন, উপরমহল থেকে নির্দেশ এসেছিল বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি খাইয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার। তাঁর কথায়, ‘ওইদিন আমাদের কাছে পড়ুয়াদের আগেভাগে মিড ডে মিল দেওয়ার এবং তারপর তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ এসেছিল।’ তাই প্রত্যেকদিন সকাল ৯টা থেকে ৩টে পর্যন্ত স্কুল চললেও ঘটনার দিন ১২টার মধ্যেই ছুটি হয়ে যায় স্কুল।
প্রাইমারি স্কুলের টিচার ইনচার্জ দেশরাজ সিং বলেন, ‘পড়ুয়াদের মিড ডে মিল খেতে দেওয়ার পর তাদের তড়িঘড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কেউ কেউ মিড ডে মিল না খেয়েই বাড়ি চলে গিয়েছে। কেউ আবার বইয়ের ব্যাগও ফেলে রেখে চলে যায়। পরে একদল বাঁদর এসে সেই সব ব্যাগ ছিঁড়েখুঁড়ে একশা করে’। আর ওই স্কুলের মাত্র ১০০ মিটার দূরেই তখন ছক কষা হচ্ছিল অন্য এক বাঁদরামির। যা থামাতে গিয়েই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বুলন্দশহরের পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিং।
তবে ওই স্কুলের স্রেফ পড়ুয়ারাই নয়, কয়েকজন শিক্ষক যাঁদের বাড়ি তুলনামূলকভাবে দূরে, তাঁরাও তাড়াতাড়ি স্কুল ছেড়ে চলে যান। এরপর গোটা মঙ্গলবার স্কুল বন্ধ ছিল। বুধবার স্কুল খুললেও কোনও পড়ুয়ারই দেখা মেলেনি। ফলে এমন সন্দেহজনক ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরই প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসন কী আগে থেকেই এই ঘটনার কথা জানত? নাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে এমন নির্দেশ যাবেই বা কেন? জানা সত্বেও প্রশাসনের তরফে ঝামেলা রোখার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
অন্যদিকে, সুবোধ সিংয়ের ছোট ছেলে অভিষেক এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের ক্যামেরায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিজের জোরালো বক্তব্য জানিয়েছে। বলেছে হিন্দু-মুসলিমদের বিরোধে জড়িয়ে দেওয়ার একটা ভয়ংকর চেষ্টা চলছে। এই গণসন্ত্রাসের সংস্কৃতি গোটা দেশের পক্ষেই বিপজ্জনক। আজ একজন পুলিশ অফিসারের প্রাণ গেলো কাল কিন্তু হিংসায় উন্মত্ত এই জনতাই হয়তো কোনো মন্ত্রীর প্রাণ নেবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন মহলের দাবি, প্রশাসনিক গাফিলতি না থাকলে বেঘোরে প্রাণ হারাতেন না ইন্সপেক্টর সুবোধ সিং এবং ২০ বছর বয়সি ওই যুবক। আটকানো যেত ওই ভয়াবহ হিংসার ঘটনাও।