জ্বলন্ত বুলন্দশহরকে উপেক্ষা করেই গোরক্ষপুরে লেজার-শো দেখতে মগ্ন তিনি, গতকাল এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে। সেই চাপের মুখে পড়েই মঙ্গলবার রাতে তড়িঘড়ি পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। কিন্তু তাতে বিতর্ক বাড়ল বই কমল না।
কারণ, বৈঠকে পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ এবং যুবক সুমিত কুমার সিংহের হত্যা নিয়ে নীরবই থাকলেন যোগী। বরং গোহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিলেন। যেন দু’ দুটো মানুষের প্রাণের কোনও মূল্যই নেই তাঁর কাছে! পাশাপাশি, বুন্দলশহরে তৈরি হওয়া হিংসার পরিবেশ নিয়েও একটি বাক্যও খরচ করেননি তিনি।
অন্যদিকে, গোহত্যার অভিযোগে বুলন্দশহরের চিঙ্গারওয়াতি থেকে তিন কিমি দূরে নয়াবংশ গ্রামের সাত জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। তবে আশ্চর্যের বিষয় তাঁদের মধ্যে এক জনের বয়স মাত্র ১০ এবং আরেক জনের বয়স ১২! ফলে তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই।
এখানেই শেষ নয়। জানা গেছে, এই সাত সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে গোহত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন হিংসায় মূল অভিযুক্ত বজরং দলের নেতা যোগেশ রাজ! তাই এ প্রশ্নও উঠেছে, যোগেশের অভিযোগ কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে?
প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে বুলন্দশহরে ২৫টি গবাদি পশুর দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। গোহত্যার গুজব ছড়িয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি পথে নামলে অশান্ত হয়ে ওঠে গোটা বুলন্দশহর। এর জেরেই খুন হন সুবোধ ও সুমিত। এই ঘটনায় গোহত্যা এবং হিংসার ঘটনা নিয়ে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হিংসার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত যোগেশ সোমবার থেকেই ফেরার।
যোগেশের দিকে আঙুল উঠলেও, বজরং দলের নেতৃত্বের দৃঢ় বিশ্বাস সে নির্দোষ। সে নাকি এমন কাজ করতেই পারে না! বুধবার ভিডিয়ো প্রকাশ করে যোগেশ এমন দাবিও করেছে যে, ওইদিন ঘটনাস্থলে সে নাকি ছিলই না! যদিও পুলিশের দেওয়া ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে তাঁকে।
তবে ফেরার যোগেশের এফআইআরের ওপর ভিত্তি করেই মঙ্গলবার নয়াবংশ গ্রামে হানা দেয় পুলিশ। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানোর পর পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির দুই পড়ুয়া ‘গোহত্যাকারী’কে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এফআইআর-এ নাম রয়েছে সরফুদ্দিন এবং পারভেজের। তবে সরফুদ্দিনের ভাই মহম্মদ হুসেন জানান, ‘২৯ নভেম্বর থেকে সরফুদ্দিন বাইরে ছিলেন। গত কাল তিনি গ্রামে ফেরেন।’
গ্রামবাসীদের থেকে জানা গেছে, ঘটনার দিন গ্রামে ছিলেন না পারভেজও। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, সুদাইফ চৌধুরি নামের কেউ কোনও দিনই এই গ্রামে ছিলেন না। এছাড়া এফআইআর-এ নাম থাকা ইলিয়াস এবং শরাফত দু’জনেই বহু দিন আগে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
বুলন্দশহরের হিংসার পিছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন সকলেই। কারণ, ঘটনার পরেই উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। যেমন- গোহত্যার গুজব ছড়ানোর জন্য সোমবারই কেন বাছা হল? আবার, দিনক্ষণ সময় মেনে বজরং দল, আরএসএস, বিজেপি কর্মী-সমর্থকরাই বা কী করে একইসঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেন?
আসলে, সে দিন ১০ লক্ষ মুসলমান নমাজের জন্য বুলন্দশহরে জড়ো হবেন, এ কথা আগে থাকতেই জানা ছিল সকলের। ফলে গোলমাল পাকানোর জন্য এমন সুবর্ণ সুযোগকে হাতছাড়া করতে চাননি হিন্দুত্ববাদীরা, এমনটাই মনে করছেন সকলে।
বস্তুত, রাজ্য পুলিশ যে প্রাথমিক তদন্ত-রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, গবাদি পশুদের মেরে আখের খেতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশেরই একাংশ বলছে, গোহত্যার গুজব ছড়াতেই এই কথা প্রচার করা হয়।