১). কর্ণাটকের মোরাব বলে একটি গ্রামে একটা গোটা লেক, হ্যাঁ ৩৬ একরের একটা লেক থেকে সব জল পাম্প করে বের করে ফেলা হয়। খটখটে শুকনো করে দেওয়া হয় লেক। কারণ সেই লেকে এক এইচআইভি পসিটিভ মহিলা ডুবে মারা যান। জানিয়ে রাখা ভালো, এইডস একসাথে স্নান করলে, খেলে বা ছুঁলে হয় না। দুজন মানুষের শারীরিক মিলনের মাধ্যমে, ইনজেকশনের মাধ্যমে, রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে বা এইচআইভি পজিটিভ মায়ের থেকে সন্তানের হতে পারে। যাইহোক!
২). দু সপ্তাহ আগেই উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে এক তরুনী গণ ধর্ষিত হন। যেরকম রোজ হচ্ছে। এ মেয়ে জেদ করে পুলিশে অভিযোগ লেখাতে যান। পুলিশ কাকু মানা করে এফআইআর লেখাতে কারণ যে মূল অভিযুক্ত সে বড় মাতব্বর। ও ফিরে যায়। দুদিন পরে আবার আসে। এবার আর ফিরতে পারে না পুলিশ স্টেশন থেকে। তাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে তার মাথায় কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়৷ মৃত্যুর সাথে লড়ছে মেয়েটি৷ জেসিকা লালের মতো কোন আন্দোলন শুরু হয়নি৷ আমার আপনার ফেসবুকে এই নিয়ে লেখালেখি ও বিশেষ হয়নি। আমরা তখন রনবীর-দীপিকা, আমরা তখন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। আর নির্ভয়ার মতো ঘটনাটা দিল্লিতে ও ঘটেনি যে। যাইহোক!
৩). নাসিকের এক কৃষক পেঁয়াজ চাষ করে মন্ডিতে বেচতে যায়। প্রায় ৭৫০ কেজি নাসিক পেঁয়াজ। দাম পায় এক হাজার চৌষট্টি টাকা। মানে একটাকা চল্লিশ পয়সা প্রতি কেজি৷ চার মাস লেগেছে ফলাতে। লোকসানের কথা ছেড়েই দিলাম। রাগে দুঃখে পুরো টাকাটা ধরে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজ রসুন খান না। তবে যারা পেঁয়াজ চাষীর টাকা খাচ্ছে, যারা একটাকায় এক কিলো পেঁয়াজ কিনে তিরিশ টাকায় আমাদের বেচছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নিচ্ছেন না। যাইহোক!
৪).২০১৪ থেকে আজ অবধি স্রেফ গরু চোর সন্দেহে বা গরুর মাংস ফ্রিজে রাখা বা নিয়ে যাওয়ার অপরাধে এ দেশের ২৮জনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ১৫০জনের ওপর মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছে৷ অথচ পৃথিবীর বৃহত্তম গরুর মাংস রফতানি বা বিফ এক্সপোর্ট করে যে দেশ দারুণ মুনাফার বিনিময়ে তা হলো ভারতবর্ষ৷ যাইহোক!
৫). আমরা যখন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মূর্তি বানাচ্ছিলাম, পাশের দেশ চিনে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু air purifier tower বসিয়ে ফেলেছে৷ দুশো ফুটের বা কুড়ি তলা উঁচু এক মিনার যা গোটা শহরের বায়ু শুদ্ধ করার এক পরিকল্পনা। খরচ হয়েছে আমাদের সরদার মূর্তির আধা। এরকম আরো গোটা পাঁচেক বসানো হবে চিনের বিভিন্ন শহরে৷ আমরা ও মিনারের চেয়ে উঁচু কিছু বানাবো। সরদারের পরে রাম মূর্তি। তারপর আরো কিছুর। অনেক কিছুর। যাইহোক!
এই পাঁচটা খবরের মতো আরো হাজার হাজার খবর, লাখ লাখ ঘটনা রোজ ডিলিট হয়ে যায়, ডাস্টবিনে স্থান পায়, পিছনের দিকে চলে যায় এ দেশে। আর আপনি এরপর ও ভাবেন এ সবের চেয়ে অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এ দেশের কোন বিতর্কিত এলাকায় ২৬বছর আগে আজকের দিনে ঠান্ডা মাথায় কোন মসজিদ ভেঙে এক মন্দির নির্মাণের পবিত্র সংকল্প?
এরপরে ও অবাক হবেন কেন পৃথিবীর এগিয়ে থাকা দেশগুলো ভারত মাতা কি জ্যায় না বলে ও বা এতো বজ্জাত হয়ে ও বেশির ভাগ নাগরিককে প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা, বুনিয়াদি শিক্ষা, খাদ্য সুরক্ষা আর বাসস্থান তৈরীর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে? যাইহোক!
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )