বাংলা সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ইতিমধ্যেই ভূষিত হয়েছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার সহ অনেক ব্যক্তি৷ এবার সেই মুকুট উঠতে চলেছে বিখ্যাত সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের মাথায়৷ ২০১৮ সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়৷
‘শ্রীকৃষ্ণের শেষ কটা দিন’ বইটিই তাঁকে এনে দিল এই সম্মান৷ বাংলা সাহিত্য মহলে এমন খবরে উঠেছে খুশির ঢেউ৷ সাহিত্যিকরা মনে করছেন, আরো অনেক আগেই তাঁর এই সম্মান পাওনা ছিল৷ তাঁর লেখার মান, শব্দশৈলী, বিষয়বস্তুর উৎকৃষ্টতা তাঁকে এই সম্মানের যোগ্য দাবিদারদের তালিকায় প্রথম দিকেই রাখে৷ সুবোধ সরকার মনে করেন, ‘আজ থেকে পঁচিশ বছর আগেই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের এই সম্মান পাওয়া উচিত ছিল।’ বাংলার আরও অনেক সাহিত্যিকও এমনটাই মনে করছেন। অবশেষে সেই আক্ষেপ মিটল।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৬ সালে। স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা। তাঁর লেখা ‘লোটাকম্বল’ উপন্যাস প্রবল জনপ্রিয় হয় পাঠকমহলে। আসলে তাঁর লেখার অন্যতম রসদ ছিল ‘ব্ল্যাক হিউমার’। যাকে তিনি তাঁর প্রতিভার জোরে ‘সাদায়’ পরিণত করেছিলেন। সঞ্জীব নিজেই বলেছেন, ‘ভেতরের দুঃখকে হিউমারে পরিণত করা আমার মুদ্রাদোষ।’ এ ছাড়াও তাঁর একটি অাধ্যাত্ম জগৎও আছে। রামকৃষ্ণ, মা সারদা ও বিবেকানন্দের ভক্ত এই লেখকের লেখাগুলিতে সব সময়েই ফুটে উঠেছে তাঁদের ভাবাদর্শ।
গল্প, উপন্যাস, আধ্যাত্ম বিষয়ক রচনা, কল্পলোকের গল্পসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে তাঁর অবাধ বিচরণের জন্যই তিনি জনপ্রিয় ঘরে ঘরে ৷ ১৯৮১ সালে তিনি আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন ৷ তাঁর বিখ্যাত সৃষ্টি গুলির মধ্যে অন্যতম লোটাকম্বল, শাখাপ্রশাখা, শ্বেত পাথরের থালা ইত্যাদি৷
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের সম্মানপ্রাপ্তির সংবাদে খুশি বাংলার শিল্পী ও সাহিত্যিকেরা। সাহিত্য অ্যাকাডেমির বাংলা উপদেশক পর্ষদের সদস্য ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক হর্ষ দত্ত জানিয়েছেন, ‘যখন উনি তুমুল জনপ্রিয়, তখন এই সম্মান পেলে আরও ভাল হত। ব্যক্তি সঞ্জীবকে দীর্ঘ দিন ধরেই চিনি। তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলাম। এক সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্যও হয়েছিল। তিনি আমাকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছিলেন। আমি খুব খুশি তাঁর এই সম্মানপ্রাপ্তিতে।’
সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে বাংলার জুরি মেম্বার ছিলেন নবনীতা দেব সেন, সমরেশ মজুমদার, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৯ জানুয়ারি দিল্লিতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে পুরস্কার স্বরূপ একলাখ টাকার একটি চেক, তাম্রপত্র ও উত্তরীয় তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে।