আজ মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভা থেকে সরকারি আধিকারিক থেকে জনপ্রতিনিধি, সকলকে কড়া বার্তা দেন তিনি। সাফ বলেন, ‘নিজেদের কাজ করুন। আপনারা খালি চাইবেন আর আমি এসে কাজ করে দেব?’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিধায়কদের ধমক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জনতার উদ্দেশ্যে বার্তা দিলেন যে, পরিষেবা দিতে না পারলে সরকার বিধায়কদেরও রেয়াত করে না। পাশাপাশি মানুষের সবার্থে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী যে বদ্ধপরিকর সেটাও বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
কয়েক দিন আগেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বন্যপ্রাণীর আক্রমণে কারও মৃত্যু হলে সরকার দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকের মাঝেই শালবনির তৃণমূলের বিধায়ক উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘সরকার বলেছিল বন্যপ্রাণীর আক্রমণে কারও মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের সঙ্গে চাকরি দেবে’। তখনই রেগে যান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘কিচ্ছু জানো না’!
নির্মল বাংলা বা গীতাঞ্জলি প্রকল্পের বাড়ি বানিয়ে দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানান মমতা। বলেন, ‘গীতাঞ্জলি প্রকল্পে অনেকে টাকা নিচ্ছে। রেশন দোকানে প্রাপ্য চালও কেটে নেওয়ার অভিযোগ আসছে। এমনকী, সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার জন্য টাকা চাইছে অনেকে। সরকারি পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। কোনও জনপ্রতিনিধিকে টাকা দেবেন না’।
টোল ফাঁকি দিয়ে ভারি গাড়ি গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়ে। বাংলা সড়ক যোজনায় তৈরি রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হয়। অভিযোগ করেন সাংসদ মানস ভুঁইয়া। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশ, ‘গ্রামের নরম রাস্তায় ১০, ২০, ৪০ চাকার লরি ঢুকছে। টোল ফাঁকি দিতে এসব করছে। টোল ফাঁকি দেওয়া যাবে না। ৪ চাকার ছোট লরি ছাড়া আর কিছু গ্রামের রাস্তায় ঢুকবে না। খুঁটি পুতে সেসব আটকান। ব্যারিকেড করে দিন। ১০ দিন আটকে রাখুন। মোটা টাকা জরিমানা করুন। গোটা বাংলায় এই নিয়ম বলবৎ করতে হবে।’
সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, কথায় কথায় গ্রামের রোগীদের কলকাতায় রেফার করা যাবে না। এতে পথে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। মমতার কথায়, ‘জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হচ্ছে। চিকিৎসা পরিষেবার মান উন্নত হয়েছে। তাতে অনেক রোগের চিকিৎসা এখন অনায়াসে গ্রামেই হয়। অযথা কলকাতায় রেফার করার দরকার নেই। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে অবিলম্বে ক্যাথল্যাব পরিষেবা চালুর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি জঙ্গলমহলে দিনে বা রাতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন মমতা।