চিরকালই সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে এসেছে বাংলা। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনও জায়গা নেই। সেই ভরসাতেই পেটের তাগিদে বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র থেকে এখানকার কয়লাখনিতে কাজ করতে আসেন অসংখ্য মানুষ।
কিন্তু বাংলা আর হিন্দিভাষার মিশেলে কয়লাখনির শ্রমিক মহল্লায় যে সম্প্রীতি ও সংহতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তা বিনষ্ট করার চেষ্টা চলছে। যা ঠেকাতেই জামুড়িয়ার বাসিন্দাদের সাক্ষী রেখে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির গদি বদলে দেওয়ার ডাক দিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জামুড়িয়ার শ্রীপুর এরিয়া স্টেডিয়ামের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, দিল্লি কা গদ্দি বদল দো, বদল দো। তবে শুধু আহ্বান জানিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী গতকাল স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দেশের ঐক্য-সংহতি রক্ষায় এবার এটাই হবে তাঁর নতুন স্লোগান। এটাই হবে তাঁর নতুন লক্ষ্য। এই কথা শোনার পরেই হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাস্থল।
ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিম বর্ধমানের মিশ্রভাষী এলাকায় বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ও উর্দুর প্রসারে জোর দিয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। তৈরি হয়েছে হিন্দি মাধ্যম স্কুল ও কলেজ। যে সব এলাকায় ১০ শতাংশের বেশি মানুষ উর্দুতে কথা বলেন, সেখানে সেই ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবুও গত লোকসভা নির্বাচনে ধর্মীয় রাজনীতিকে উস্কে হিন্দিভাষীদের বড়সড় অংশের সমর্থন জুটিয়ে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে পদ্ম ফুটিয়েছিল গেরুয়া শিবির।
তবে গতকালের সভায় একেবারে উলট পুরাণ। জামুড়িয়ায় সরকারি পরিষেবা প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বাংলাভাষীদের পাশাপাশি চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি ছিল হিন্দি ও উর্দুভাষী মানুষের। তাই মুখ্যমন্ত্রী ছটপুজোয় রাজ্য সরকারের দু’দিনের ছুটি ঘোষণার বিষয়টি উত্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গেই সোল্লাশে ফেটে পড়ে জনতা। মমতা বলেন, আসানসোলকে কেন্দ্র করে নতুন জেলা হয়েছে। নতুন নতুন প্রকল্প হয়েছে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকাটাই আমাদের রীতি। আমরা বিজেপি’র মতো ভোট টানার জন্য বাঙালি-বিহারি করি না।
আসানসোলের পাশেই রয়েছে বিজেপি শাসিত ঝাড়খণ্ডের শহর ধানবাদ। সেখানকার উদাহরণ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কী অবস্থা সেখানে! ওরা (বিজেপি) মানুষের উন্নয়নে কী করেছে? শুধু দাঙ্গা আর গুন্ডাগর্দি ছাড়া ওরা কোনও কাজ করে না। ওরা শুধু চায়, আসানসোলে ভাই-ভাইয়ে লড়িয়ে দাঙ্গা বাধাতে। রাজ্যের সীমান্ত পেরিয়ে ওরা আসছে গোলমাল পাকাতে, দাঙ্গা লাগাতে। হিন্দিভাষী ভাই-বোনরা গর্জে উঠুন। সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। সবাইকে নিয়ে চলাটাই ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্থান’-এর রীতি। বাংলাভাষীদের মতোই হিন্দি আর উর্দুভাষীরাও রাজ্যের সম্পদ, গর্ব। বাংলাভাষী, হিন্দিভাষী আর উর্দুভাষী সবার এই রাজ্য বাংলা। বাংলাই পথ দেখাবে দেশকে।