এ যেন জুতো মেরে গরুদান! যে সিঙ্গুরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সিপিএমের সশস্ত্র হার্মাদ বাহিনী এবং পুলিশ পাঠিয়ে কৃষকদের ওপর গুলি চালিয়ে, তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে, কৃষিজমি কেড়ে নিয়েছিল বাম সরকার, সেই সিঙ্গুরের জন্যই নাকি সিপিএমের কৃষক মিছিল!
যদিও বুধবারের কৃষক পদযাত্রায় হাঁটার জন্য কৃষক পাওয়া যাবে না, তা আগেই জানত সিপিএম। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে সুদিন ফিরেছে কৃষকদের। দীর্ঘ ৭ বছরে তাঁদের একাধিক সুযোগ সুবিধা করে দিয়ে কোনও অভাবই রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী। তার ওপর সদ্যই কৃষকদের সুবিধার কথা ভেবে কৃষিঋণের সুদের হারে ২ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। ফলে দলের ‘রোড শো’ তে কৃষকদের প্রক্সি খুঁজতে আলিমুদ্দিনের তরফে ভার দেওয়া হয় দলের দীর্ঘদিনের নেতা সুজন ওরফে ‘ফুটেজ’ চক্রবর্তীকে।
বরাবরই ‘প্রক্সি’ দেওয়ার কাজ বেশ ভাল ভাবেই উতরে দিয়েছেন সুজন। ফলে আশানুরূপ ভাবেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাঁজার চাষ এবং মাও-মাকু করা পড়ুয়া কৃষক এবং বাঘাযতীন-গাঙ্গুলীবাগান-ভাঙড়-জীবনতলার ‘শহুরে কৃষক’দের পদযাত্রায় পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ক্যানিং-বাসন্তী থেকেও এসেছিল কিছু হার্মাদ কৃষক। সব মিলিয়ে বুধবার সিঙ্গুর স্টেশন জমজমাট হয়ে উঠল হাজার হাজার ‘প্রক্সি’ কৃষকের উপস্থিতিতে। স্টেশনেই ফ্রুট জুস খেতে এবং ল্যাপটপ খুলে আপডেট দিতে দেখা গেলো যাদবপুরের পড়ুয়া কৃষকদের, যাঁদের প্রায় সারাদিনই ফেসবুকে ডিজিটালি চাষাবাদ করতে দেখা যায়। এমনকি গতকাল স্টেশনের মধ্যেই তাঁরা একে অপরকে টেক্কা দিলেন সেলফির ফলনে।
আলিমুদ্দিন নেতাদের কাছে আগে থেকেই খবর ছিল যে, বাজেমেলিয়া ও তার আশপাশের গ্রামগুলির মহিলারা ঝাঁটা-জুতো নিয়ে তাঁদের স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছেন। ফলে তাঁদের সেই সুযোগ না দিয়ে ওই সব জায়গা এড়িয়ে রতনপুর থেকেই মিছিল শুরু করে সিপিএমের প্রক্সি কৃষকরা। লাঙল নিয়েই হাঁটতেন সকলে, কিন্তু তা একটু বেশিই ভারি হয়ে যেত। ফলে সকলেই প্রতীকী লাঙল হিসেবে হাতে বাগিয়ে ধরেছিলেন নিজের নিজের স্মার্টফোন। গোটা পদযাত্রাতেই স্লোগান দিয়ে গেলেন যাদবপুরের পড়ুয়া কৃষকরা।
অন্যদিকে, পূর্ব ঘোষণা মতো দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে দেখাই গেল না মিছিলের শুরুতে। পরে জানা গেল তিনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চেপে অপেক্ষা করছেন, প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ওই ভাড়া করা ‘শহুরে কৃষক’দের ডানকুনি এসে পৌঁছানোর। মিছিলের লাল ঝান্ডার সিগন্যাল মিলতেই গাড়ি থেকে নেমে ক্যামেরার সামনে একটু পোজ দিয়ে মিছিলের সামনে দাঁড়ালেন সূর্যবাবু। এবং ওই প্রক্সি কৃষকদের সঙ্গেই হাঁটতে শুরু করলেন পুরনো ঝরঝরে ট্র্যাক্টরের মতো।
তবে প্রায় একযুগ আগে বাংলায় ক্ষমতায় থাকা সিপিএমের অত্যাচারের কথা ভোলেননি সিঙ্গুর-সহ গোটা রাজ্যবাসী। ক্ষমতার দম্ভে যেই সিপিএম নির্বিচারে লাঠি-গুলি চালিয়ে, জোর করে বহু ফসলী কৃষি জমি দখল করেছিল, আজ তাদের এই জঘন্য রাজনীতি দেখে কার্যত ফুঁসছেন সিঙ্গুরের মানুষ।