৩ ডিসেম্বের মেয়র নির্বাচনে ফিরহাদ হাকিমের জয় কার্যত সময়ের অপেক্ষা। কারণ এই মুহূর্তে কলকাতা পুরসভার ১৪৪ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ১২২ জনই শাসকদলের। টিমটিম করে জ্বলতে থাকা প্রদীপের মত বিজেপির কাউন্সিলর রয়েছে ৫ জন। এই পরিস্থিতিতে হার নিশ্চিত জেনেও বুধবার আচমকাই কলকাতা পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলার মীনাদেবী পুরোহিত মেয়র পদে লড়তে চেয়ে মনোনয়নপত্র পেশ করেছেন। উল্লেখ্য, বুধবারই মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন জমা দেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
ঘটনার সূত্রপাত কিছুদিন আগেই। মেয়র নির্বাচনের জন্য কাউন্সিলারদের বাইরে কাউকে প্রার্থী করতে সম্প্রতি পুরসভা আইনে কিছু সংশোধন এনেছে রাজ্য সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই কোনও ভুলত্রূটি খুঁজে না পেয়ে সেই আইন পাসের সময় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কোনরকম বিরোধিতা করেননি বিধানসভায়। যার ফলে দল বেজায় ক্ষুব্ধ তার ওপর। তড়িঘড়ি করে সোমবার এই বিলের বিরোধিতা করে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিকে নালিশ করেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও মঙ্গবার সেই বিলে স্বাক্ষর করেন রাজ্যপাল। যার অর্থ সংশ্লিষ্ট বিলটি আইনে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আর তার পরেই মীনাদেবীর এই মনোনয়নপত্র পেশ করাকে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। অনেকে বলছেন বিধানসভায় দিলীপবাবুর ভুলের খেসারত দিতে স্রেফ তৃণমূল বিরোধিতায় মীনাদেবীকে লড়িয়ে দেওয়া হল !
শাসকের জয় নিশ্চিত জেনেও কেন মেয়র পদে মীনাদেবীকে দাঁড় করানো হল? জবাবে বিজেপি’র রাজ্য সম্পাদক তথা ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিজয় ওঝা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে আমরা প্রধান বিরোধী দল। স্বভাবতই কলকাতা পুরসভার মেয়র পদে ভোটাভুটিতে আমরা অংশগ্রহণ করছি। কংগ্রেস-সিপিএম যদি আক্ষরিক অর্থেই তৃণমূল বিরোধী হয়, তবে এই ভোটে ওদের বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেওয়া উচিত’। যদিও তিনি নিজেও জানেন মীনাদেবীর হার অবশ্যম্ভাবী। তাই আগেভাগেই নিজেদের ভাবমূর্তি পরিস্কার করার জন্য তিনি বলেন, ‘ভোটে হার-জিত তো আছেই। তবে ভোটে শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। যে ব্যক্তির কাঁধে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব, যিনি সর্বদা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘোরেন, তিনি কী করে কলকাতা পুরসভার মেয়র হিসেবে সময় দেবেন?’ যদিও এই মুহূর্তে বিজেপির কোন মন্তব্যই হালে পানি পাচ্ছে না!
দিলীপের এই ভুল ঢাকতে তৎপর হয়ে বিজেপি’র সম্পাদক মন্তব্য করেছেন , ‘উনি বিধানসভায় ওই বিলকে সমর্থনও করেননি, আবার বিরোধিতাও করেননি। ওই বিলে একাধিক সংশোধনী এনেছিলেন’। কিন্তু যার ভুল নিয়ে বিজেপির অন্দরে এত হইচই তাঁর আপাতত কোন মন্তব্য নেই। একে তো এমন এক ভুলের দায় আর সেই ভুলের খেসারতে আসন্ন মেয়র নির্বাচনে অবশ্যম্ভাবী হারের যন্ত্রণায় কার্যত কাতর দিলীপ ঘোষ।।