রাজ্যের হাল ধরার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর বলে এসেছেন তাঁর লক্ষ্য রাজ্যের সব মানুষের মাথার ওপর ছাদ তৈরি করে দেওয়া। সেই লক্ষ্য পূরণেই ইতিমধ্যেই তিনি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে রাজ্যের অনেক মানুষ পুরসভাগুলির নিজস্ব জমিতে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্প ‘বাংলার বাড়ি’তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। প্রকল্প রয়েছে গ্রামের মানুষদের জন্যেও, যার নাম গীতাঞ্জলী। এবার শহরে বসবাসকারী আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষদের বাড়ি তৈরির উদ্দেশ্যে নতুন প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। যার নাম ‘নিজশ্রী’। নামকরণ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে সরকারি জমিতে ফ্ল্যাট পাবেন নিম্নমধ্যবিত্তরা। যাঁদের মাসিক আয় ১৫ হাজারের নিচে, তাঁদের জন্য রয়েছে ৩৭৮ বর্গ ফুটের এক কামরার ফ্ল্যাটের সুযোগ। দাম আনুমানিক ৭ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। যাঁদের মাসিক আয় ৩০ হাজারের নিচে, তাঁরা পাবেন দু’কামরার ফ্ল্যাট। ৫৫৯ বর্গ ফুটের এই ফ্ল্যাটের দাম প্রায় সাড়ে ন’লক্ষ টাকা। তবে রাজ্যের শহরের নিরিখে ফ্ল্যাটের দামের তারতম্য থাকবে। যেমন কলকাতা লাগোয়া হলে ফ্ল্যাটের দাম একটু বেশি হবে। কলকাতা শহর ছাড়া সব জেলার শহরের আশপাশের সরকারি জমিতে এই ফ্ল্যাট হবে।
আপাতত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে ১০–১২টি জায়গায় তৈরি হবে ৫০ হাজার ফ্ল্যাট। আবাসন দপ্তরের ওয়েবসাইটে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে। এর পর লটারির মাধ্যমে বণ্টন করা হবে ফ্ল্যাট। জানা গেছে, এই প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা আপাতত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ইতিমধ্যেই শুরু করে দেওয়া হয়েছে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ। সম্প্রতি খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে আসানসোল, শিলিগুড়ি, ডাবগ্রাম ও হলদিয়ার জন্য আবেদন চেয়েছে আবাসন দপ্তর। প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে গেলে আবেদনকারীর নিজের নামে এ রাজ্যে কোনও পাকা বাড়ি থাকা চলবে না। আবেদনকারী যে এলাকার জন্য আবেদন করবেন, সেই জেলারই বাসিন্দা হতে হবে। দরখাস্ত জমা দেওয়ার সময় এক কামরার ফ্ল্যাটের জন্য দিতে হবে ২,৫০০ টাকা। দু’কামরার জন্য দিতে হবে ৫ হাজার টাকা। ‘নিজশ্রী’ প্রকল্পে যাঁরা ফ্ল্যাট পাবেন, তাঁদের জমি ও পরিকাঠামোর উন্নতি বা পুর–পরিষেবার জন্য কোনও টাকা দিতে হবে না।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজনের বাড়ি তৈরির ইচ্ছে থাকলেও, সাধ্যে কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তাঁদের নিজস্ব মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরিতে সরকার পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সবসময় বলেন তাঁর রাজ্যে সকলেই সমান, প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে ভালো ভাবে জীবনযাপন করার। রাজ্যের মানুষকে নিয়ে যে সোনার বাংলা তিনি গড়তে চান, নিজশ্রী প্রকল্প তাকে ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করছেন বাংলার জনগণ।