উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই উন্নয়ন কাজ করে যেতে হবে মা-মাটি-মানুষের জন্য। কাজ ফেরে রেখে তাই কোনও ভাবেই উন্নয়নকে থমকে দেওয়া যাবে না। বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবনে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে বুধবার এমনি নির্দেশ দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গতকাল জেলা এবং রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিক, পুলিশ আধিকারিক, জেলার বণিক সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রকল্পের যুক্ত শিল্পদ্যোগীদের নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আসবে যাবে। কিন্তু গরীব মানুষের ভাতার টাকা কোনও ভাবেই আটকে রাখা যাবে না। অনেক সময়ই এমনটা লক্ষ্য করা যায় যে নির্বাচন এসেছে, তাই গিরীব মানুষের ভাতার টাকা বন্ধ হয়ে গেল!’ তাঁর প্রশ্ন, ‘এটা কেন হবে?’ এরপরই জেলাশাসকের উদ্দেশ্যে তাঁর কড়া নির্দেশ, ‘আপনি নিজে এটা লক্ষ্য রাখবেন।’
বৈঠকে প্রত্যেকটি দফতরের কাজকর্মের হিসেব নেন মমতা। পাশাপাশি কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, তার সমাধান কী হল বে, তাও বলে দেন তিনি। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জেলাগুলির সীমানায় ওয়াচ টাওয়ার ও সিসিফ্যামেরা (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) বসিয়ে নজরদারি চালাতে বলেছিলেন। গতকালও জঙ্গলমহলের নজরদারিতে সেই একই ব্যবস্থা নিতে বললেন তিনি। জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাওকে তাঁর কড়া নির্দেশ, ‘ঝাড়গ্রাম, ঝিলিমিলি হয়ে বাঁকুড়া আসার পথ ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সীমানা হচ্ছে বাড়ির বারান্দার মতো। সিসিটিভি, ওয়াচটাওয়ার গড়ে নজর রাখুন ওই এলাকায়।’
১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ করেও টাকা পেতে দেরির অভিযোগ আসায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একশো দিনের কাজের টাকা সময় মত দিতে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’ ৩৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক নেই জানার পর মুখ্যমন্ত্রী ওই সব এলাকায় সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের কাজ যেন ধারাবাহিক ভাবে চলে এবং শ্রমিকরা যেন কাজের টাকা ১৫ দিনের মধ্যেই পেয়ে যান, তা দেখতে হবে।’
বৃষ্টিপাতের অভাবে জেলার বেশ কিছু এলাকায় খরা পরিস্থিতি এবং জল সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে সব এলাকায় বিকল্প কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান। প্রশাসনিক কর্তারা জানান, ওই সব এলাকায় ডালশস্য চাষ ও একশো দিনের প্রকল্পের কাজ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ‘অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কোনও মানুষ জলকষ্টে না পড়েন।’ একইসঙ্গে কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারকে এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফিল্ডে থেকে কাজ করুন। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের মতো জেলাগুলির চাষের সমস্যা মেটাতে বিভিন্ন দফতরকে এক সঙ্গে নিয়ে ‘সিনার্জি’র (শিল্প সম্মেলন) মতো বৈঠক করে সমস্যা মেটাতে হবে। আর চাষিদের কোনও সমস্যা হলে জানাবেন, আমি দেখে নেব।’
জেলার স্বাস্থ্যের হাল নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন, ওন্দা ব্লকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা জেলার অন্যান্য ব্লকগুলির তুলনায় কম। এরপরেই ওন্দার বিধায়ক অরূপ খানকে তিনি বলেন, বিধায়ক, পুলিশ সুপার, সাংসদ, ওন্দার ওসি সকলে মিলে আলোচনায় বসে এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের বিষয়ে সচেতন হোন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়া মেডিক্যালের খোঁজ নেন। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, স্বাস্থ্যভবনে যে সব দাবিদাওয়া জানানো হয়েছিল, তার বেশির ভাগই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার দিকেও সমান ভাবে নজর দেন তিনি। পুরুলিয়া জেলায় একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাতনা থানার কমলপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে। অবিলম্বে স্কুলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একটি অডিটোরিয়াম গড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন জানালে তিনি তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন শীঘ্রই অডিটোরিয়াম হবে। এর পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকার রাস্তা নিয়েও আধিকারিকদের নানা রকম পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।