পুরোপুরি শীতকাল এখনও না এলেও চারপাশে শীতের আমেজ বেশ বোঝা যাচ্ছে। আর শীতকাল মানেই একটা উৎসবের অনুভূতি৷ খাওয়াদাওয়া, ঘোরাঘুরি, পিকনিক এই সব মিলিয়ে জমজমাট একটা ব্যাপার। বড়দিন এবং নতুন বছর দরজায় কড়া নাড়ছে অর্থাৎ ঘরোয়া পার্টির আয়োজনের কথাও ভাবার সময় শুরু হয়ে গেছে।
শীতকালে কিন্তু খাওয়াদাওয়াটা একটা অন্যতম ব্যাপার। আর শীতকাল মানেই নতুন আলু, ফুলকপি, বাধাকপির বাজার। নতুন আলু দিয়ে আলুর দম প্রায় সকলের পছন্দ কিন্তু রসনা তৃপ্তির ক্ষেত্রে কপিরাও পিছিয়ে নেই। খুব অল্প সময়, সাধারণ উপকরণ দিয়েই বানিয়ে ফেলা যায় কপির আসাধারণ কিছু রেসিপি।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ফুলকপির কিছু রেসিপি।
মালাই ফুলকপি
উপকরণ: ফুলকপি ১টি, আদা-রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ করে, কাজুবাদাম বাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি ১/২ কাপ। হলুদ, মরিচ ও ধনে গুঁড়ো ১/২ চা-চামচ করে। এলাচ ও কাঁচা মরিচ বাটা ১/২ চা-চামচ করে। তেজপাতা ও দারচিনি ২-৩টি করে, দুধ ১/২ কাপ, ক্রিম ১/২ কাপ, ঘি ১/২ কাপ, টক দই ১/২ কাপ, চিনি ও লবণ স্বাদমতো, কিশমিশ অল্প পরিমাণে।
প্রণালি: ফুলকপির ফুল ছাড়িয়ে নিন। প্যানে অল্প ঘি দিয়ে ফুলগুলো ভেজে তুলে রাখুন। এবার এতে বাকি ঘি দিয়ে তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ভেজে নিন। এতে কাজুবাদাম ছাড়া অন্য সব বাটা ও গুঁড়ো মশলা দিয়ে কষিয়ে নিন। তিন মিনিট পর দই দিন। আরেকটু কষিয়ে অল্প দুধ দিন। মশলা ভাজা হলে টমেটো ও ভাজা ফুলকপি দিয়ে আবার একটু দুধ দিয়ে কষান। একটু পর বাকি দুধ দিয়ে ঝোল ঝোল করে নিন। ফুটে উঠলে অল্প দুধে কাজুবাদাম বাটা গুলে দিন। এই রান্নায় জল দেওয়া যাবে না। ফুলকপি সেদ্ধ হয়ে এলে ক্রিম দিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রেখে চিনি ও কিশমিশ দিয়ে নামান।
ফুলকপির রাজ কোফতা
উপকরণ: কুচি করা ফুলকপি ৪ কাপ, মাংসের কিমা বাটা ১ কাপ, মিহি পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা কুচি ১ চা-চামচ। কাঁচা মরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি ও লবণ স্বাদমতো। গোলমরিচ গুঁড়ো ও চাট মশলার গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ করে। টমেটো কুচি ১/২ কাপ, ব্রেড ক্রাম্ব ও কর্নফ্লাওয়ার পরিমাণমতো। ডিম ২টি, কাজুবাদাম ও কিশমিশ কুচি ২ টেবিল চামচ করে, ভাজার জন্য তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেল ছাড়া সব উপকরণ ফুলকপির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। হাতে অল্প তেল নিয়ে কোফতা বানিয়ে ডুবো তেলে মচমচে করে ভেজে তুলুন। এরপর চাইলে সাধারণ ডালনা করে তাতে কোফতাগুলো দিয়ে দিন অথবা চায়ের আসরে স্যালাড কাসুন্দি সহযোগে পরিবেশন করুন।
ফুলকপির ফুলবাহার
উপকরণ: ছোট করে কাটা ফুলকপির ফুল ৩ কাপ, কালোজিরে ১ চা-চামচ, শুকনো মরিচ ২-৩টি, মাখন ৪ টেবিল চামচ, আদা ও রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ করে। টমেটো সস ৩ টেবিল চামচ, সয়া সস ২ টেবিল চামচ। লবণ, কাঁচা মরিচ কুচি পরিমাণমতো, জিরে গুঁড়ো সামান্য, ধনেপাতা সামান্য।
প্রণালি: অল্প মাখনে ফুলগুলো এক মিনিট ভেজে নামান। এবার মাখনে শুকনো মরিচ ও কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে আদা ও রসুন কুচি ভেজে নিন। এতে ফুলগুলো দিয়ে লবণ দিন। আধসেদ্ধ হয়ে এলে সস ও সয়া সস দিয়ে পাঁচ মিনিট ঢেকে দিন। ফুলকপি সেদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হলে কাঁচা মরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি ও জিরে গুঁড়ো দিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রেখে দিন। ওপরে একটু মাখন দিয়ে নামিয়ে নিন৷
এবার আসি বাধাকপির কথায়। এই সবজিটিকে অনেক কেউই পছন্দ করেন না তবে সুন্দর করে রান্না করলে বোঝা যায় বাধাকপি দিয়েও এমন অভিনব কিছু পদ হয়।
বাধাকপির মাঞ্চুরিয়ান
উপকরণ: ২ কাপ বাধাকপি কুচি। ১টি গাজর কুচি। ১/২ চা-চামচ লাল মরিচের গুঁড়ো। ১/২ চা-চামচ আদা ও রসুন বাটা। ২ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার। ১/২ চা-চামচ লবণ। ১/২ কাপ ময়দা। ডুবো তেলে ভাজার জন্য পরিমাণ মতো তেল।
সস তৈরির জন্য লাগবে: ২ টেবিল চামচ তেল। ২ কোয়া রসুন কুচি। ৪ টেবিল চামচ পেঁয়াজ পাতা কুচি। ১/৪ পেঁয়াজ কুচি। ১টি কাঁচামরিচ কুচি। অর্ধেক ক্যাপসিকাম কিউব করে কাটা। ১ চা-চামচ চিলি সস। ২ টেবিল চামচ সয়া সস। ২ টেবিল চামচ ভিনিগার। ১/৪ চা-চামচ লবণ। ২ টেবিল চামচ টমেটো সস। ১/৪ চা-চামচ গোলমরিচের গুঁড়ো।
পদ্ধতি: প্রথমে বাধাকপি কুচি, গাজর কুচি, লাল মরিচের গুঁড়ো, আদা ও রসুন পেস্ট, লবণ, ময়দা ও কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে একটা নরম ডো তৈরি করতে হবে।এবার ডো থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে বল আকারে তৈরি করে ডুবো তেলে ভাজতে হবে একদম মচমচে করে। সস তৈরি করতে একটা বড় প্যানে তেল দিয়ে রসুন কুচি, পেঁয়াজ-পাতা, পেঁয়াজ-কুচি, কাঁচামরিচ-কুচি ও ক্যাপসিকাম দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। তারপর চিলি সস, সয়া সস, টমেটো সস, ভিনিগার, লবণ, গোলমরিচের গুঁড়ো দিন। ভালো করে রান্না করতে হবে যতক্ষণ না একটা থকথকে ভাব আসে। যখন হয়ে আসবে তখন ভেজে রাখা বাধাকপির বলগুলো দিয়ে দিতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল মজাদার বাধাকপির মাঞ্চুরিয়ান।
শীতের খাওয়াদাওয়া হোক কবজি ডুবিয়ে৷ রসনা তৃপ্তি কিন্তু ভালো থাকার অন্যতম চাবিকাঠি৷