নোটবন্দি, জিএসটি, সিবিআই একের পর এক ইস্যুতে যখন বেসামাল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, তখন আবারও মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ পুরুলিয়ার বলরামপুরে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, ‘এটা শান্তি বনাম সন্ত্রাসের লড়াই, এটা সংহতি বনাম সাম্প্রদায়িকতার লড়াই, এটা বাংলা বনাম বিজেপির লড়াই।’
পুরুলিয়ার মানুষকে অভিষেক বলেন, আমরা মানুষকে যা কথা দিয়েছি সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। এই পিছিয়ে পড়া জেলায় মাওবাদীদের দমন করে সংহতি-ধর্মনিরপেক্ষতা-শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, মানুষকে সার্বিক উন্নয়নের পথে পরিচালিত করাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি, ছত্তিসগড়, বিহার, উড়িষ্যায় অন্য সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু মাথায় রাখবেন মাওবাদী দমন করে যদি কেউ প্রকৃতপক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে থাকেন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাওবাদী প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে, ৭-৮ বছর আগে এই বলরামপুর এলাকায় কি পরিস্থিতি ছিল? মানুষ সারাদিন বাইরে বেরোতে ভয় পেতো। কিন্তু এই ৭ বছরে এখানে একটা মাওবাদীও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। এই জেলায় গত ৭-৮ বছরে একটাও মাও নাশকতার ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি। এটাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর জয়, এটাই বাংলার মা-মাটি-মানুষের জয়।
এদিন বিজেপিকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি অভিষেক। তিনি বলেন, যারা আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তাদের কী হল? গ্যাসের দাম ১০০০ টাকা, পেট্রোলের দাম ১০০ টাকা, ডলারের দাম ৭৫ টাকা, ডালের দাম ৮০ টাকা! এটাই আজকের পরিস্থিতি। মানুষ আজ খেতে পাচ্ছে না, কেন্দ্র মানুষের জন্য কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করছে না। উল্টে টাকা বাড়িতে রাখলে বলছে কালো। আর ব্যাঙ্কে রাখলে তা গেল। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে দেশ, কিন্তু মূর্তির পিছনে খরচ করছে ৩০০০ কোটি টাকা।
এরপরেই তাঁর সংযোজন, দেশেতে লাগিয়ে আগুন, কোটি টাকার মূর্তি… সাধারণ মানুষের সর্বনাশ আর বিজেপির ফুর্তি – এই হল ভারতীয় জনতা পার্টির নগ্ন রূপ। ওরা গুজরাতে বলছে বিহারী খেদাও আর আসামে বলছে বাঙালি খেদাও। ওরা বাংলা বিরোধী। বিজেপির নেতারা বলে, পুঁতে দেব, গর্তে ঢুকিয়ে দেব, মেরে দেব, কেটে দেব। আর আমরা বলি সাজিয়ে দেব, গুছিয়ে দেব, তৈরী করে দেব। এটা শান্তি বনাম সন্ত্রাসের লড়াই, এটা সংহতি বনাম সাম্প্রদায়িকতার লড়াই, এটা বাংলা বনাম ভারতীয় জনতা পার্টির লড়াই।
প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি অভিষেক। তিনি ব্যাঙ্গ করে বলেন, আমরা কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে কোন দিন কেটলি নিয়ে চা বেচতে দেখিনি কিন্তু আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টালির ছাদের নিচে থাকতে দেখেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিন্দুমাত্র বদলাননি। ওই টালির ছাদের নিচে থেকেই ১০ কোটি মানুষের উন্নয়ন পরিচালনা করেছেন।
পুরুলিয়াবাসী ও দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, আগামী ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেড। আমি অনুরোধ জানাব বিজেপি বিরোধী জোটের মধ্যমণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা শোনার জন্য এই জেলা থেকে যেন সর্বোচ্চ মানুষ এই সমাবেশে যোগ দেন। আগামী দিন নতুন ভারত, ধর্মনিরপেক্ষ ভারত, শান্তির ভারত, প্রগতির ভারত গড়ার লক্ষ্যে আপনারা সকলেই ব্রিগেডের সমাবেশে উপস্থিত হবেন আমি এই আশা রাখি।
পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্বেকে আরও চাঙ্গা করতে অভিষেকের বার্তা, আগে সিপিএমের আমলে মুখ্যমন্ত্রীরা ১-২ বারের বেশি পুরুলিয়ায় পা রাখার সাহস পাননি। কিন্তু পুরুলিয়া আজ উন্নয়নের পথে পরিচালিত হচ্ছে; আমাদের দায়িত্ব, আমাদের কর্তব্য এই শান্তির আবহকে অক্ষুন্ন রেখে পুরুলিয়াকে যেন আমরা বাংলার ২৩টি জেলার মধ্যে ১ নম্বর করতে পারি। জাতি দলমত নির্বিশেষে আমাদের উন্নয়ন করে যেতে হবে।