বাম আমলে রেশন দোকানে গিয়ে চাল, গম, চিনির বদলে মিলত স্রেফ দুর্নীতি। তবে ক্ষমতায় আসার পরই শক্ত হাতে রাজ্যের রেশনিং ব্যবস্থার হাল ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই থেকেই রেশনে সরকারি বরাদ্দ মাথাপিছু মাসিক ৮ কিলো চাল এবং ৩ কিলো গম।
সোমবার বিকালে ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেশন দোকানে ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করতে হবে। ২ টাকা কেজি দরে চাল পেতে কেউ বাকি আছে কিনা খোঁজ নিতে হবে। বাড়াতে হবে নজরদারি। আদিবাসীদের বোঝাতে হবে, তাঁরা কী কী সরকারি সহায়তা পান।
মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ ‘বিডিওরা, থানার ওসিরা এলাকায় যখন ঘুরবেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে রেশন দোকানে একটু খোঁজ নেবেন। দেখবেন যে সব মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের কাজ হচ্ছে কি না।’ অফিসারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রচারটাও করতে হবে। দেখতে হবে মানুষ যেন ভাতটা খায়। প্রচার করুন, ভাত খান। ওটা বিক্রি করার জন্য দেওয়া হয় না।’
গতকালের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা খাদ্যনিয়ামকের খোঁজ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি তাঁর কাছে জানতে চান, জেলায় রেশন দোকান কত। ৩৫৯টি দোকান আছে জেনে প্রশ্ন করেন, ‘ব্লকে ব্লকে যান? আমলাশোল গেছেন? কার কার রেশনকার্ড নেই, ২ টাকা কেজি দরে চাল পেতে কেউ বাকি আছে কিনা খোঁজ নিয়েছেন?’
এরপরেই তিনি নির্দেশ দেন, ‘জেলাশাসকের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করুন। রেশন দোকানগুলিতে সারপ্রাইজ ভিজিট করে সেগুলি কী রকম চলছে দেখুন। উপভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা জানুন। দফতরের কর্মী আধিকারিকদের নিয়ে প্রতি মাসে একবার বৈঠকে বসুন। কোন ব্লকে, কোন গ্রাম পঞ্চায়েতে রেশনের কী সমস্যা, তা সমাধান করুন। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের সাহায্য নিন। আইসিডিএস, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে মিড–ডে মিল ঠিকঠাক চলছে কিনা দেখুন। কোনও গরমিল বা সমস্যা থাকলে তা আমাদের জানান।’
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, সরকার গরিব মানুষের রেশন ব্যবস্থাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘রেশনকার্ড যেন উপভোক্তা ছাড়া অন্য কারও হাতে না থাকে। সরকার প্রতি মাসে ২ টাকা কেজি দরে এবং প্রতি সপ্তাহে জঙ্গলমহলের গরিব পরিবারগুলোকে ৮ কেজি চাল এবং ৩ কেজি গম দেয়। অর্থাৎ একটি পরিবার প্রতি মাসে যা চাল–গম পান তা যথেষ্ট। যদি কোনও রেশন ডিলার ওজনে ৫০ গ্রামও কম দেন, তাদের লাইসেন্স কেড়ে নেবে সরকার।’
পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এমনও শোনা যাচ্ছে, যাঁরা মাসে ওই ৫৫ কেজি চাল–গম পাচ্ছেন, তাঁদের কেউ কেউ তা বিক্রি করে দিচ্ছেন। এটা ঠিক নয়। সরকার আপনাকে খাওয়ার জন্য দিচ্ছে। পেট ভরে খান। এটা বিক্রি করবেন না।’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘২০–২৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনে ২ টাকা কেজি দরে দেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা ভর্তুকি দেয় রাজ্য সরকার। এখানে কারও ভাগ বসানোর অধিকার নেই।’