“সেই সব মেয়েদের জন্য যারা মেরি কমের গল্পটা ও ফিকে করে দিতে পারতো।”
মেরি কমের রেকর্ড সংখ্যক বিশ্বপদক জয়ের খবরটা নিয়ে আমরা অবশ্যই দিনরাত মাতামাতি করতাম যদি তার একটা অবৈধ সম্পর্ক হতো কোন শহরের মহানাগরিকের সাথে বা উনি কলতলার ঝগড়া শুরু করতেন কোন রিয়্যালিটি শোতে। বা তার বিয়ে হতো লেক কোমোতে৷ সাজসজ্জার দায়িত্বে থাকতো সব্যসাচী আর মালাবদল হতো রনবীরের সাথে। কিংবা কোন সিরিয়ালে মেরি কম অভিনয় করতো আর সংলাপে এঁয়েচো চেঁয়েচো থাকতো। থাকে নি। তাই তাকে নিয়ে শুকনো কিছু “ওয়েল ডান” শুভেচ্ছাতেই থেমে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া।
মেরি কমকে নিয়ে আবার নিশ্চয়ই আমরা মাতামাতি করতাম যদি আজ প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ঘোষণা করতেন তাকে নিয়ে আবার ছবি করার৷ কতদিন চকোলেট খাননি আর ক’ রাউন্ড দৌড় রোজ মারবেন মেরি কম হতে, তা গোগ্রাসে গিলতাম। কেই বা কুঁদো কুঁদো চোখের এক গাট্টাগোট্টা মেয়েকে নিয়ে মাতামাতি করতে ভালোবাসে যখন বিশ্বসুন্দরী নিজে তার রোলে অভিনয় করবেন।
আমরা আজ ও গোগ্রাসে গিলি কোন মেয়েকে ধর্ষণের খবর৷ তার মুখে এসিড মারার কিসসা। মিটু গোছের কিছু হলে ও আধা সন্দেহ, চাপা টেনশন নিয়ে খবর পড়ি কিন্তু মেয়েছেলের কুস্তি জেতার বিশ্বরেকর্ড? তা আবার কোন খবর হলো?
এই মেয়ে মনিপুরী। মানে উত্তর ভারতের কাছে যেটা ওই যে চায়নার কাছাকাছি ‘ নর্থইস্ট’ রাজ্য। মানে যেখান থেকে রাষ্ট্রের মূলভূমিতে এলে হামেশাই শুনতে হয় বর্ণ বিদ্বেষী টিটকারি। ভাগ্যিস আপনি মেরি কম। বিখ্যাত না হলেই চিংকি উপাধিতে ভূষিত করা হত। আমাদের কাছে মেরি কম একটাই। বাকিটা নাক খ্যাঁদা ও চোখ ছোট চিনে। আর চিনে মানে চিনেম্যান চ্যাংচুং আরশোলা খায়। এরা যে বিশ্ব পদক ও চমকায় সেটা ফ্যান্টাসি।
এই মেয়ে আবার তিন সন্তানের মা। মাঝে সব ছেড়ে ছুড়ে সংসার করেছে। দুই সন্তান মানুষ করেছে তারপর আবার রিং এ ফিরে এসেছে। এ মেয়ে রাঁধে, চুল বাঁধে আবার গলা ও সাধে। আজ্ঞে!
সাথে একটা ভিডিও দিলাম তার গানের। সুর ধরে ধরে গান গাইছে মেয়ে। সেই মেয়ে যে বক্সিং করে, পদক জেতে, সন্তান মানুষ করে, বাড়ি ফিরে মা বাবার খোঁজ খবর ও রাখে।
এই ভিডিওটা সেই প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য যারা মনে করে বিয়ের পরে তাদের অনেককিছু শেষ হয়ে গেল। আর গলা সাধা হবে না, পছন্দের খেলায় অংশগ্রহণ হবে না, শখের বিষয়গুলো আর করা যাবে না। মেরি কমের গল্পটা সেই মেয়েদের জন্য যারা চাকরি করে কিন্তু একটা সময়ের পর সাহস পায় না সন্তান ধারণের বা তাদের জন্য যারা মা হওয়ার পরে ধরেই নেয় যে কাজের জায়গাতে আর ফেরা সম্ভব না৷
আপনারা যারা রোজনামচার জীবনে রোজ মেয়ের টিফিন, বরের জামাটা ইস্ত্রি করে আয়নায় নিজের মুখটা দেখছেন আর তারপরে টিভি চালিয়ে ফাগুন বউ এর হালহকিকত জানছেন, হোয়াটসাপে কিটি পার্টির গ্রুপে স্মাইলি পাঠাচ্ছেন, তারা একবারটি নিজের জীবনের বক্সিং রিং এ নেমেই দেখুন না।
যেই স্বপ্ন গুলো অধরা থেকে গেল বিয়ের পরে, পূরণ করে নিন। আবার তানপুরাটার ধুলো ঝেড়ে রেওয়াজ শুরু করুন না, একটি বার বিসিএস এর জন্য রাত জেগে পড়ে পরিক্ষাটা দিয়েই ফেলুন না, আবার না হয় টাইমস জবে একটা একাউন্ট খুলুন, যে রান্নাগুলো রোজ এতো যত্ন করে একলা দুপুরে সময় কাটাতে রাঁধেন সেগুলো ইউটিউবে ও দিন, কে বলতে পারে আপনি ও মেরি কমের গল্পটা ফিকে করে দিয়ে একটা দারুণ ম্যাজিক নিজের গল্প নিয়ে লিখে ফেলবেন৷
https://www.facebook.com/ekhonkhobor18/videos/1978604872440467/?t=2
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )