পরীক্ষায় ভালো ফল করা মানেই পড়াশোনাটা ভালো শেখা হয়েছে, তা নয়। তেমনই ভারতের লগ্নী-পরিস্থিতির উন্নতি হলেও লগ্নী আসছে না মোটেই। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদের অভিযোগ, মোদী সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতির হাল এমনই। যা বাইরে থেকে চকমক করলেও ভেতর থেকে ফাঁপা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জাতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি হোক বা না-হোক ওই তালিকায় ভারতের নাম ঠেলে তোলার ব্যাপারে মোদী এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী জেটলি প্রায় বাতিকগ্রস্ত। এই মরিয়া দেখনদারির ফল সরাসরি বোঝা না গেলেও, তা অত্যন্ত খারাপ। দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত কার্যত বিশ্ব ব্যাঙ্কের কর্তাদের পায়ে অঞ্জলি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের সঙ্গে ভারতীয় অর্থ মন্ত্রকের অজস্র বৈঠকের ‘মিনিটস’, সরকারি স্তরে চালাচালি হওয়া চিঠি এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করার ব্যাপারে যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোদী দিয়েছিলেন ক্ষমতায় আসার পর তার ধারকাছ দিয়েও যাননি তাঁরা। বরং বিশ্বব্যাঙ্কে লবি করে নম্বর বাড়াতে চেয়েছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন, যেসব মাপকাঠিতে লগ্নীর অনুকূল পরিস্থিতি বিচার করা হয়, তাতে কিছু অদলবদল করতে। কিন্তু সেখানেও ধাক্কাই জুটেছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার মতো কোমরের জোর মোদী-জেটলি লবির ছিল না।
অর্থনীতিবিদ লবীশ ভাণ্ডারির মতে, ‘যে বিষয়গুলি বদলানো সবচেয়ে সহজ বারবার সেগুলিই খুঁজে নিতে গিয়ে, দেশের জন্য কোনটা জরুরী, সেই বোধটাই হারিয়ে ফেলেছে মোদী সরকার। আর ক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়ে গেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে’। অর্থাৎ চাকরির পরীক্ষায় যেভাবে টিক দিয়ে নম্বর বাড়ানো হয়, সেই কায়দাতেই র্যাঙ্কিং-এ উঠে এসেছে ভারত, কিন্তু তার সুফল দেশের অর্থনীতি পায়নি। গত অক্টোবরে যখন সরকারিভাবে ঘোষণা হল দেশের অর্থনীতি ১০০ থেকে ৭৭ নম্বরে উঠে এসেছে, তখন জেটলি নিজের পিঠ চাপড়েছিলেন। কিন্তু উঠেছিল এই পদ্ধতিতেই।
সবচেয়ে জরুরী কথাটা বলেছিলেন সরকারি আমলা অরবিন্দ মায়ারাম। মোদী সরকারের প্রথম কয়েক মাসে তিনি ছিলেন অর্থসচিব। তিনিই প্রশ্ন তুলেছিলেন, দেশে লগ্নী পরিস্থিতির উন্নতি হলেও লগ্নী আসছে কী? পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছিলেন, ২০১১ সালে ভারতে লগ্নির পরিমাণ ছিল গড় জাতীয় উৎপাদনের ৩৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে সেটা কমে হয়েছে ২৭ শতাংশ। যখন নাকি লগ্নি-পরিস্থিতি আগের থেকে ঢের ভাল। এমন প্রশ্ন তোলার ফল, অরবিন্দকে কম গুরুত্বের পর্যটকমন্ত্রকে ঠেলে দেয় মোদী সরকার।