এবার দিল্লিতে দাঁড়িয়েই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ‘দেশের সার্বিক জিডিপির তুলনায় রাজ্যের গড় অনেক ভাল।’ শুক্রবার ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’–এ দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী দাবি করলেন, রাজ্যের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার যেখানে ২০১৭-১৮তে ৯.১ শতাংশ, দেশের ক্ষেত্রে তা ৭ শতাংশ।
তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের নোট বাতিল, ত্রুটিপূর্ণ জিএসটির ফলে অর্থব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ছোট ও মাঝারি শিল্পপতিরা বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকারের আর্থিক পরিকল্পনার ব্যর্থতায় জিডিপি (অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলেও হিসেব দেন জিএসটি সংক্রান্ত হাইপাওয়ার কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান অমিতবাবু। গত ৪ বছরে মোদী সরকার দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সর্বনাশ করে দিয়েছে মন্তব্য করে অমিতবাবু বলেন, ৫৯ মিনিটে ঋণ দেওয়ার নতুন প্রকল্প সামনে এনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি তথ্যও দেন, তাড়াহুড়ো করে জিএসটি চালু করায় এখনও পর্যন্ত রাজ্যগুলির ৭৮ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি, অমিতবাবু বলেন, জিএসটি’র রিটার্ন ফাইল করার ব্যবস্থা (জিএসটি-নেটওয়ার্ক) কেবল জটিলই নয়, ত্রুটিপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে অকেজো। তাঁর দাবি, এই ব্যবস্থায় যে অর্থ উপার্জন হচ্ছে, তা আদতে হিসেব বহির্ভূত এবং হাওলার মাধ্যমে কালো টাকা খাটানোর ব্যবস্থাকেই খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সেই সঙ্গেই আরবিআইয়ের সঙ্গে সরকারের বিরোধকে (যা ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্যের বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল) একটা রোগের উপসর্গ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরবিআই ভেতর থেকে ভেঙে পড়ছে। কেন্দ্রের সরকার জানে না কীভাবে আরবিআই বা সিবিআই–এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালাতে হয়।
পাশাপাশি তিনি জানান, মোদী সরকার যেখানে ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের ভাঁওতা দিচ্ছে, সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার উদ্যোগীদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁর কথায়, গত বছর আমাদের টার্গেট ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা এবং উদ্যোগে আদতে তা ৪৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সাড়ে ৯ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে। যার মধ্যে ৪০ শতাংশ কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।
দিল্লির প্রগতি ময়দানে গত ১৪ তারিখ থেকে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পদ্যোগীদের (এমএসএমই) স্টল থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি সামগ্রী বিক্রি হয়েছে। আগামী ২৭তারিখ পর্যন্ত মেলা চলবে। ফলে ক্ষুদ্রশিল্পী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সব মিলিয়ে এক কোটি টাকার উপর আয় করতে পারবেন বলেই পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যাশা।