রাজনৈতিক দল না-কি বাজারি পণ্য? বিজেপির বিজ্ঞাপনের বহর দেখে এমন প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। সিনেমা-অনুষ্ঠান বা সিরিয়ালের ফাঁকে যতবার দাঁতের মাজন, সাবান, ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপণ আসে, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি বার ‘মনোরঞ্জন’ করতে আসে মোদী সরকারের বিজ্ঞাপন। চলতি নভেম্বর মাসে যে কোনও বাজারচলতি পণ্যের থেকে বিজেপি নিজেদের বিজ্ঞাপন দেখিয়েছে সবচেয়ে বেশী। এমনই তথ্য জানাল ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিল। এখন প্রশ্ন, বিজেপিও কি তাহলে দাঁতের মাজন, সুগন্ধী সাবানের মতো আরেকটি বাজারি পণ্য?
কতবার এসেছে বিজেপির বিজ্ঞাপন? বার্ক ইন্ডিয়ার তথ্য জানাচ্ছে, ১০ নভেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর এই এক সপ্তাহে কোলগেট দাঁতের মাজন নিজেদের বিজ্ঞাপণ দেখিয়েছে ৮৯৩৮ বার, সন্তুর সাবান দেখিয়েছে ১১, ২২২ বার, নেটফ্লিক্স দেখিয়েছে ১২, ৯৫১ বার। সেখানে বিজেপি নিজেদের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপণ দেখিয়েছে ২২, ০৯৯ বার। অর্থাৎ যে কোনও আন্তর্জাতিক ব্র্যাণ্ডকেও টেক্কা দিয়ে প্রায় দ্বিগুণ হারে প্রচার চালিয়েছে বিজেপি।
‘বিজ্ঞাপন সর্বস্ব মোদী সরকার’, বিরোধীদের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংসদে দাঁড়িয়ে বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছেন, মোদী সরকার যে পরিমাণ টাকা উন্নয়নের পেছনে খরচ করে বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করে তারচেয়ে অনেক বেশী। বিরোধীদের এই অভিযোগকেই এবার স্বীকৃতি দিল বার্ক ইন্ডিয়ার তথ্য। আত্মপ্রচারই যে বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য সেটাও সামনে এনে দিল বার্ক ইন্ডিয়া।
অর্থাৎ ‘বিকাশ’এর জন্য খরচ চুলোয় যাক। আগে বিজ্ঞাপন। অভিযোগ, বিজেপির মনোভাব এমনই। কারণ, তিন বছরে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকার মঞ্জুর করেছে মাত্র ৫৬.৮ কোটি টাকা৷ অথচ এই তিন বছরে মোদী সরকার বিজ্ঞাপন বাবদ কত টাকা খরচ করেছে জানলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য৷ ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০১৭ অক্টোবর পর্যন্ত এই তিন বছরে সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিন মাধ্যম ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন বাবদ ৩ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে মোদী সরকার। ভাবুন! তথ্যের অধিকার আইনে জানা গেছে এই মারাত্মক তথ্য।
এখানেই শেষ নয়। ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী৷ তারপর থেকেই শুধু মোদীর বিজ্ঞাপনের জন্য ১১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক৷ মোদীর ‘মন কি বাত’ রেডিও অনুষ্ঠানের জন্য ২০১৫ জুলাই পর্যন্ত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ হয়েছে ৮.৫ কোটি টাকা৷
অথচ ২০১৫ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজ্ঞাপন বাবদ ৫২৬ কোটি খরচ করার জন্য আম আদমি পার্টির সমালোচনা করেছিল বিজেপি৷ কথায় আছে, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’। অভিযোগ, বিজেপিরও তাই।