সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব হওয়ার পর মেট্রো স্টেশনে একদিন ‘হঠাৎ দেখা’। দুজনেরই স্বপ্ন ছিল সুযোগ পেলে ছবি বানাবেন। ফলে আগুনে ঘি পড়ল তাঁদের ‘আলাপ’-এর দিনই। দেখা হতেই দুইবন্ধু মিলে ঠিক করে ফেললেন ছবি বানালে দুজনে একসঙ্গেই বানাবেন।
ভাবা মাত্রই কাজ। কিছুদিনের মধ্যেই ফেসবুক থেকে আরও কিছু বন্ধু জুটিয়ে তাঁরা নেমে পড়লেন চলচ্চিত্রের ময়দানে। এর আগে ফেসবুকে গল্প, কবিতা, কাপলেট লিখে হাত পাকিয়েছেন দুজনেই। ফলে ছবির গল্প ভাবতে এবং চিত্রনাট্য লিখতে বিন্দুমাত্রও দেরি করেননি তাঁরা। এরপর মাত্র বারো দিনের নিরলস পরিশ্রমের ফলস্বরূপ জন্ম নিল পরিচালক জুটি সুজয়নীল বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভীক রায়ের প্রথম সন্তান, তাঁদের প্রথম ছবি ‘সেমিকোলন’।
ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার তীর্থদীপ চট্টোপাধ্যায় প্রবাসী বাঙালি। এক গুরুত্বপূর্ণ কাজের সূত্রে বেশ কয়েকবছর বাদে দেশে ফিরতে হয় তাঁকে। এয়ারপোর্টে নেমেই তিনি তাঁর পূর্ব পরিকল্পনা মত পৌঁছে যান কলকাতায় এক পুরনো বন্ধুর ফ্ল্যাটে। কিন্তু অফিসের কাজে আটকে পড়া বন্ধু জানান, রাতে আর ফিরবেন না। বন্ধু তো এলেন না, তবে রাত গড়াতেই সেই ফ্ল্যাটে এসে হাজির এমন এক অতিথি, যাকে দেখে মুহূর্তেই ওলটপালট হয়ে যায় তীর্থর এতবছরের সমস্ত হিসেব। আগন্তুকের বর্তমান পরিচয় এবং আগেকার জীবনকাহিনীকে কেন্দ্র করেই বাড়তে থাকে রহস্যের জাল, পিছুটান, ভালবাসা, গল্প এবং ‘সেমিকোলন’।
সেমিকোলন ছবির শুটিংয়ের একটি দৃশ্য
মাপে ছোট ছবি হলেও, আবেগে কিন্তু মোটেও ছোট নয় সুজয়-অভীক জুটির এই প্রথম ছবি। আর কথায় আছে, ভাল কাজের কদর সবখানেই। ফলে, একে একে ডাক আসে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব থেকে। ১০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই ছবির প্রথম স্ক্রিনিং হয় হায়দ্রাবাদ বেঙ্গলি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এরপর রাণাঘাট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয়ে এবারের ২৪ তম কলকাতা আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছোট ছবির বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে সেমিকোলন।
ছবিটির চিত্রগ্রহণের দায়িত্ব সামলেছেন সৌগত সরকার, সম্পাদনা এবং সুর অর্ঘ্য ভট্টাচার্য’র, শিল্প ভাবনা এবং পোস্টার ডিজাইনে ছিলেন পল্লবী নন্দন, শব্দে দীপেন্দু হালদার এবং অভিনয় করেছেন নবাগত দীপজয় এবং নবাগতা সৃজা। শুধু সুজয়-অভীক নয়, পুরো টিমেরই এটাই প্রথম কাজ।
এখন খবর-এর তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে সুজয়নীল জানান, ‘এই ছবিটি আসলে বন্ধুত্বের উদযাপন। পুরোপুরি থেমে না যাওয়ার একটা গল্প। যে কোনও মুহূর্তে জীবন নতুন কোনও মোড় নিতে পারে; তাই অপেক্ষাটা কোনওদিন ছাড়া উচিত নয়। আর আমাদের এই ছবি নিয়ে বাকি যা বলার আছে, তা তো স্ক্রিনেই দেখতে পাবেন দর্শক।’
ছবি প্রসঙ্গে অভীক বলেন, “সেমিকোলন’ রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মত ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’-এর বার্তা বহন করে। পরিস্থিতির বশবর্তী হয়েই দু’জন মানুষের আলাদা হয়ে যাওয়া, তাই শেষ পর্যন্ত তারা আবার এক হতে পারবে কি না, সেটাও আমরা ছেড়ে দিয়েছি পরিস্থিতির হাতে। ‘সেমিকোলন’ মানে তো সাময়িক একটা বিরতি, বিরতির পরের ঘটনা দর্শকই ঠিক করে নেবেন।”
ছবির অভিনেতা দীপজয় জানান, ‘এটি আমার প্রথম কাজ। তবে বাস্তবে আমি যেরকম, তার সঙ্গে একেবারেই মিল নেই আমার করা চরিত্রটির। আমি খুবই এক্সাইটেড।’ অভিনেত্রী সৃজা বলেন, ‘আমার চরিত্রটি এমন একজন নারীর, যে অনেক বাধা পেরিয়েছে জীবনে। এই কাজটি আমার কাছে খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল।’
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসাবে ছবিটির স্ক্রিনিং রয়েছে আগামীকাল শিশির মঞ্চে বিকেল ৪.১৫ থেকে। অভিন্নহৃদয় বন্ধু সুজয়-অভীক জুটির এই প্রথম ছবি শহরবাসীর মনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা দেখতে উদগ্রীব সকলেই। তাই আপনিও ভালবাসার মানুষের হাত ধরে বা তাঁর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে চলে আসুন। কে জানে? হয়ত ‘সেমিকোলন’-এর সামান্য বিরতির পর, আপনার জীবনের গল্পও নতুন কোনও মোড় নিতে পারে।