একদিকে নোট বাতিল, অন্যদিকে জিএসটি – এই জোড়া ধাক্কাতেই ২০১৭ থেকে বেলাইন ভারতীয় অর্থনীতি। এমনই মন্তব্য করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর তথা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজন। তাঁর মতে, বর্তমানে সাত শতাংশ হারে জিডিপি এগোচ্ছে। যা দেশের অগ্রগতির পক্ষে যথেষ্ট নয়।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় রাজন বলেন, ‘২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ভারতের অগ্রগতির গতি অতীতের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু নোট বাতিল এবং জিএসটি-র মতো পরপর দুটি ঝটকা সেই অগ্রগতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। যেখানে সারা বিশ্বের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে সেখানে ভারতের বৃদ্ধি থমকে গিয়েছে’।
ভারতের অর্থনীতিকে ঠিক পথে ফেরাতে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন, যা এই মুহূর্তে উন্নতির তিন প্রধান প্রতিবন্ধক বলে রঘুরাম রাজন মনে করছেন। এক, জীর্ণ পরিকাঠামো। বলেন, ‘রাস্তাঘাট ইত্যাদি তৈরি অর্থনৈতিক বৃদ্ধির শুরুর দিকে সাহায্য করে। কিন্তু সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নের সুযোগ করে দেয়’। দুই, দেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্র সাফসুতরো করা, যাতে নিশ্চিত করা যায়, যাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আর তিন, ব্যাঙ্কগুলোকে সমস্যামুক্ত করে ফের সচল, সক্ষম করা। আর এসবের পাশাপাশি আরও একটা বিষয় জরুরি। কোনও একজন বা দু’জন নয়, সমস্ত কাজের জন্যই অনেক লোককে দায়িত্বশীল করে তোলা। সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ খুব জরুরি। ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারই সব সিদ্ধান্ত নেয় এবং গোটা প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত বেশি কেন্দ্রীভূত। কিন্তু ওভাবে দেশ চলে না। বরং সিদ্ধান্তের দায়ভার ভাগ করে নিতে হয়।
ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের বোঝা ক্রমশ বেড়ে চলা প্রসঙ্গে রঘুরাম রাজনের সোজাকথা – সব আবর্জনা সাফ করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘সমস্যাগুলো মিটিয়ে, পরিষ্কার হিসেবের খাতা নিয়ে ব্যাঙ্কগুলোকে নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু ভারতের অনেক দিন লেগে গেল এই সমস্যার দিকে নজর দিতে, ব্যবস্থা নিতে। কারণ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আইনি সুযোগই ছিল না। কোনও সংস্থাকে দেউলিয়া ঘোষণা করার যে নিয়ম আছে, তা এ ধরনের একাধিক ব্যবস্থার মধ্যে একটা ব্যবস্থা। কিন্তু এরকম আরও নিয়ম তৈরি করতে হবে। অনাদায়ী ঋণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা হতে হবে বহুমুখী, যা কার্যকরী রাখতে হবে।’